দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলমান সীমান্ত সংঘাতে গত ছয় দিনে অন্তত ২৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সহিংসতার কারণে দুই দেশে মিলিয়ে প্রায় সাত লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে নিজ নিজ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারি সূত্র ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কম্বোডিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যের বরাতে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এজেন্সি কম্পুচিয়া প্রেস জানিয়েছে, ৭ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে দেশটিতে এ পর্যন্ত ১১ জন নিহত এবং ৭৬ জন বেসামরিক আহত হয়েছেন। একই সময়ে প্রায় ২ লাখ ৭৪ হাজার নাগরিক সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
এর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল ম্যালি সোচেতা জানান, সংঘাতে একজন সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষিত মোট নিহতের সংখ্যার মধ্যে ওই সেনা অন্তর্ভুক্ত আছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি।
অন্যদিকে থাইল্যান্ডের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সুরাসান্ত কংসিরি শুক্রবার জানান, সংঘাতে দেশটির ৯ জন সেনাসদস্য ও ৩ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৯০ জন। পরিস্থিতির অবনতিতে থাইল্যান্ডের প্রায় ৪ লাখ মানুষ নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
দুই দেশের এই দীর্ঘস্থায়ী বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো ‘এমারেল্ড ট্রায়াঙ্গল’ বা পান্না ত্রিভুজ নামে পরিচিত একটি সীমান্ত অঞ্চল। থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের সংযোগস্থলে অবস্থিত এই এলাকা প্রাচীন মন্দির ও ধর্মীয় স্থাপনায় সমৃদ্ধ। অঞ্চলটি নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে আসছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া—যার জেরে প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে।
এই সীমান্ত সংকটের সূচনা হয় বিশ শতকের শুরুতে, যখন কম্বোডিয়া ছিল ফরাসি উপনিবেশ। ১৯০৭ সালে প্রকাশিত একটি মানচিত্রে ফ্রান্স পান্না ত্রিভুজকে কম্বোডিয়ার অংশ হিসেবে দেখায়। সে সময় থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে থাইল্যান্ড।
১৯৫৩ সালে কম্বোডিয়া স্বাধীনতা অর্জন করলেও অঞ্চলটির দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব অব্যাহত থাকে। দীর্ঘদিনের সংঘাতের পর প্রায় ১৫ বছর আগে দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছালেও গত বছর মে মাস থেকে আবার উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে। চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে পাঁচ দিনের সংঘাতে দুই দেশের অন্তত ৪৮ জন নিহত হন এবং প্রায় ৩ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় সে সময় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।
চার মাসের আপাত শান্তির পর গত ৭ ডিসেম্বর থাইল্যান্ডের সীমান্তবর্তী সি সা কেত প্রদেশে ফের দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে, যা নতুন করে সহিংসতা উসকে দেয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

