আফগান বাহিনীর অতর্কিত গুলিবর্ষণের জবাবে পাল্টা অভিযান চালিয়ে আফগানিস্তানের একাধিক সামরিক ঘাঁটি দখলে নেওয়ার দাবি করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। রোববার ভোরে পরিচালিত এই অভিযানে আফগান সেনাদের বেশ কয়েকটি পোস্ট ধ্বংস হয়েছে এবং অন্তত ৫০ জন তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সামরিক সূত্র।
জিও নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই আফগান বাহিনী আঙ্গুর আদ্দা, বাজৌর ও কুরম সীমান্তে গুলি চালায়। এরপর পাকিস্তানি সেনারা দির, চিত্রাল ও বারামচা এলাকাতেও পাল্টা জবাব দেয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, আফগান বাহিনীর এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল আইএস ও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) সদস্যদের সীমান্ত অতিক্রমে সহায়তা করা।
পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত ভারী আর্টিলারি, ট্যাংক ও ড্রোন ব্যবহার করে আফগান ঘাঁটিগুলোর দিকে পাল্টা হামলা চালায়। এতে দোরান মেলা, তুর্কমানজাই ও শাহিদান পোস্টে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দাবি, পাকিস্তানের পাল্টা অভিযানে আফগান তালেবান যোদ্ধারা কয়েকটি ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়, রেখে যায় বিপুল অস্ত্র ও লাশ। এতে অন্তত ১৯টি সামরিক ঘাঁটি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর মধ্যে খারচার ফোর্ট, মানোজাবা ব্যাটালিয়ন সদর, কিলা আবদুল্লাহর লেওবুন্দ এলাকা এবং দুররানি ক্যাম্পের উল্লেখযোগ্য অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
আঙ্গুর আদ্দা সীমান্ত পোস্টে পাকিস্তানি বাহিনী নিজ দেশের পতাকা উত্তোলন করেছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। একইভাবে কুরম ও চানদোসার অঞ্চলের কয়েকটি আফগান পোস্টও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি এ ঘটনাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আফগান বাহিনী উসকানি দিয়েছে, আর পাকিস্তান সঙ্গে সঙ্গে কঠোর জবাব দিয়েছে। আমরা কারও আগ্রাসন সহ্য করব না।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, আফগান অন্তর্বর্তী সরকার ভারতের সহায়তায় সীমান্ত অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
সীমান্তবর্তী উপজাতীয় নেতারাও সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, “দেশরক্ষার যুদ্ধে আমরা সেনাদের পাশে আছি। অতীতে যেমন সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করেছি, প্রয়োজনে আবার করব।”
ধর্মীয় নেতা মৌলানা তাহির আশরাফি এক ভিডিও বার্তায় আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, “পাকিস্তান কোনো পরাশক্তি না হলেও, নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে জানে। সীমান্তে আগ্রাসন অব্যাহত থাকলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব ও কাতার। দুই দেশই সংযম ও কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে সংঘাতের তীব্রতা কমানোই এখন সবচেয়ে জরুরি।”
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে হামলার ঘটনা বেড়েছে। ইসলামাবাদের দাবি, আফগান ভূখণ্ডে টিটিপি ও আইএস জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে আফগান প্রশাসন ও টিটিপির মধ্যে আর্থিক ও লজিস্টিক সহযোগিতার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত অবৈধভাবে অবস্থান করা ৫ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি আফগান নাগরিককে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে পাকিস্তান।
একুশে সংবাদ/এ.জে