সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে বেদুইন ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে ফের তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর শুক্রবার (১৮ জুলাই) নতুন করে এ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আল-জাজিরা।
এদিকে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকারি বাহিনী সুইদায় মোতায়েন করা হয়েছে—এ ধরনের খবর ভিত্তিহীন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুরউদ্দিন আল-বাবা বলেন, “সরকারি বাহিনী স্বাভাবিক প্রস্তুতিতে রয়েছে, তবে সুইদায় এখনো কোনো সেনা মোতায়েন হয়নি। এসব গুজব ভিত্তিহীন।”
এর আগে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চলমান অস্থিরতার কারণে ইসরায়েল ৪৮ ঘণ্টার জন্য সিরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীকে সুইদা অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে।
উল্লেখ্য, বুধবার ইসরায়েল সুইদা ও দামেস্কে বিমান হামলা চালায়। সিরিয়া এ হামলাকে দেশটির সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ ও অস্থিতিশীলতা তৈরির অপচেষ্টা বলে নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (SOHR) জানায়, শুক্রবার ফের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে সুইদা শহরের পশ্চিমাংশে। এতে সরকারি-সমর্থিত বেদুইন ও উপজাতীয় যোদ্ধারা একদিকে, দ্রুজ যোদ্ধারা অন্যদিকে অবস্থান নিয়েছে। এএফপি গোলাগুলির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
অনলাইন ভিডিওগুলোতে দুই পক্ষের গোলাগুলি ও নতুন বাহিনীর আগমনের দৃশ্য দেখা গেছে।
এক ভিডিওতে বেদুইন নেতা আবদুল মুন্নিম আল-নাসিফ অস্ত্রধারীদের আহ্বান জানাচ্ছেন—সুইদায় এসে "গণহত্যা ও জাতিগত নিধন থেকে নিজেদের মানুষকে রক্ষা করতে।"
এর আগে বুধবার একটি যুদ্ধবিরতি ও সরকারি বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েও সংঘর্ষ থামেনি।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস (SNHR) জানিয়েছে, রোববার থেকে এ পর্যন্ত সুইদা ও আশেপাশের এলাকায় কমপক্ষে ৩২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৫৭০ জনেরও বেশি, উদ্ধার করা হয়েছে ৮৭ মরদেহ।
সরকারি বাহিনী, স্থানীয় মিলিশিয়া ও উপজাতীয়রা এ সহিংসতায় জড়িত বলে অভিযোগ।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলা ছিল সুইদার দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষার জন্য। যুদ্ধবিরতির পর সংঘর্ষ থামলেও ফের তা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
দামেস্ক থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক জেইনা খোদর বলেন, “এটি সিরিয়ার জন্য ভয়াবহ মোড়—দেশটি দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের পর এক ভঙ্গুর উত্তরণকাল পার করছে।” তিনি বলেন, “বেদুইন ও দ্রুজদের পুরনো শত্রুতা থাকলেও এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট, কারণ এবার বেদুইনরা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ চাচ্ছে।”
তবে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, ইসরায়েল কতটা সহনশীল থাকবে? তারা আগে জানিয়ে রেখেছে, দক্ষিণাঞ্চলে সরকারি বাহিনীকে মানবে না।
বিশ্লেষক লাবিব আল-নাহাস মনে করেন, “ইসরায়েলের মিত্ররা হুমকির মুখে। তাই সংঘর্ষ বন্ধে সীমিত সময়ের জন্য তারা স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী মেনে নিতে পারে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, সুইদায় সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত—এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, বাড়িঘর ধ্বংস ও লুটপাট।
বলা হয়েছে, “এই সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক আইনে সকল পক্ষের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক।”
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, সহিংসতার কারণে সুইদায় তাদের ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সংস্থার মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার বলেন, “আমরা কার্যকরভাবে কাজ করতে পারছি না। সব পক্ষকে মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করতে বলছি।”
একুশে সংবাদ/ এন.ট/এ.জে