দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে এক কুঁচকাওয়াজে হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ্জেদিন আল–কাসাম ব্রিগ্রেডের সদস্যরা। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের দখলদারির বিরুদ্ধে প্রথম ফিলিস্তিনি অভ্যুত্থান বা ‘ইন্তিফাদা’ থেকে জন্ম ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী আন্দোলন হামাসের। সংগঠনটির দাবি, তারা স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী। ইসরায়েলি দখলদারত্ব ও নিষ্পেষণ থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করাই তাদের লক্ষ্য।
শেখ আহমেদ ইয়াসিন ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন ধর্মীয় নেতা। পরে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার কর্মী হয়ে ওঠেন। ইসলামের মূলনীতিকে সাংগঠনিক কাঠামো হিসেবে ধরে হামাসকে ‘প্যালেস্টিনিয়ান ইসলামিক ন্যাশনাল লিবারেশন অ্যান্ড রেজিসট্যান্স মুভমেন্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। প্রতিষ্ঠার পর হামাস মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের শাখার আদলে সামরিক শাখা ইজ্জেদিন আল–কাসাম ব্রিগেড গঠন করে। ঐতিহাসিক ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই চালানো এ শাখার দায়িত্ব।
ইসরায়েলের হত্যাচেষ্টা এড়াতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গাজায় অবস্থানরত হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকে জনসমক্ষে তেমন আসছেন না। তবে তাঁদের কেউ কেউ গাজা ছেড়ে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে কাতারে নির্বাসনে থাকা বেছে নিয়েছেন। ইরান, লেবানন ও তুরস্কেও আছেন কেউ কেউ। গাজায় যেসব হামাস নেতা রয়েছেন, মূলত তাঁরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সামরিক তৎপরতা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। আর বাইরের দেশে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনটির রাজনৈতিক শাখার নেতারা।
হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহত হওয়ার ঘটনার পর সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা এখন কারা রইলেন, তাঁদের সম্পর্কে তুলে ধরেছে মিডল ইস্ট আই। ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী ও হামাসের তৃতীয় রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইরানের রাজধানী তেহরানে এক বাসভবনে গতকাল বুধবার (গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে) হামলায় নিহত হন তিনি।
১৯৪৮ সালের নাকবায় বাড়িঘর হারিয়ে নির্বাসিত হওয়া ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোর একটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইসমাইল হানিয়া। উত্তর গাজার আল–শাতি শরণার্থীশিবিরে বেড়ে ওঠেন তিনি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হামাসের প্রতিষ্ঠাকালীন তরুণ সদস্যদের একজন ছিলেন হানিয়া। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর। ১৯৮৯ সালে ইসরায়েল তাঁকে তিন বছরের জন্য কারাবন্দী করে। পরে দেশটি ১৯৯২ সালে গাজা, পশ্চিম তীর ও অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে হামাসের ৪১৫ নেতা–কর্মীকে দক্ষিণ লেবাননে নির্বাসনে পাঠায়। হানিয়া ছিলেন তাঁদেরও একজন।
ইসমাইল হানিয়া ১৯৯৩ সালে গাজায় ফিরে আসেন ও ১৯৯৭ সালে হামাসের অফিস পরিচালনার দায়িত্ব পান। ২০০৬ সালে ফিলিস্তিন আইন পরিষদের নির্বাচনে হামাস জিতলে ‘স্টেট অব প্যালেস্টাইনের’ প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। তবে ফাতাহর সঙ্গে হামাস দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ায় তিনি বেশি দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ২০১৭ সালে ইসমাইল হানিয়া গাজায় হামাসের নেতা হিসেবে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের স্থলাভিষিক্ত ও সংগঠনের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার জের ধরে সেদিন থেকেই গাজায় তাণ্ডব চালিয়ে আসছে দেশটি। গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা ও ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত পাঠানোর চেষ্টায় নিয়োজিত মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন হানিয়া।
একুশেসংবাদ/প্র.আ/হা.কা
আপনার মতামত লিখুন :