অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেছেন তার প্রেমিক জিয়াউদ্দিন উরফি। এমনকি সেই সময় একই ঘরের খাটে বসে তিনি বিষয়টি দেখছিলেন বলে জানান। র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর উরফি এমনটাই দাবি করেছেন।
শুক্রবার (৩ নভেম্বর) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে হাজির করে এ তথ্যগুলো দিয়েছে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
উরফির দেওয়া তথ্যটি অনুযায়ী খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘এর আগেও হিমু বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার কথা বলেছেন, কিন্তু করেননি। এমনকি আগের রাত বুধবারে নিজের ঘরের সিলিং রডে প্লাস্টিকের দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন।’
ঘটনার বিবরণ দিয়ে এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পরদিন ঘটনার সময় বাসাতে আসেন উরফি। তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। হিমু পাশের রুম থেকে একটা মই এনে উপরে উঠতে থাকেন। সে সময় উরফি খাটে বসা থাকলেও বাধা দেয়নি। কারণ তার দাবি অনুযায়ী এর আগেও বহুবার মই বেয়ে উপরে উঠলেও হিমু নেমে এসেছেন। কিন্তু এবার সত্যিই হিমু ঝুলে পড়েন। তাকে ধরা চেষ্টা করলেও তিনি ব্যর্থ হন বলে জানান। এরপর পাশের রুমে থাকা মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডাকেন। রান্না ঘর থেকে বটি এনে দড়িটি কেটে নামান।’
প্রাথমিক জিজ্ঞসাবাদে আরো জানা যায়, হুমায়রা হিমু একজন জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পী এবং প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয় করেছেন। ২০১৪ সালে হুমায়রা হিমুর খালাতো বোন এর সাথে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা জনিত কারনে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পারিবারিক আত্মীয়ের সম্পর্কের সুবাধে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন এর সাথে ভিকটিম হিমুর পরিচয় হয়। হিমুর খালাতো বোনের সাথে জিয়াউদ্দিন এর বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে গ্রেফতারকৃত জানায়। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন অন্যত্র বিবাহ করলেও হিমুর সঙ্গে সে বিভিন্নভাবে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখতো এবং বিগত ০৪ মাস পূর্বে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরি হয়। এক পর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন ভিকটিমকে বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো বলে জানায়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া ও বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হতো। এছাড়াও বিগত ২/৩ বছর ধরে ভিকটিম হিমু বিগো লাইভ অ্যাপে এ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছে বলে গ্রেফতারকৃত জানায়। এসব বিষয় নিয়েও বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা ও মনোমালিন্যের সৃষ্টি হতো বলে জানা যায়।
গত ০২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আনুমানিক বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হিমুর উত্তরার বাসায় আসে জিয়া। পরবর্তীতে অনলাইন জুয়াসহ বিষয় নিয়ে ভিকটিম হিমু ও জিয়াউদ্দিনের মধ্যে বাকবিতন্ডার একপর্যায় ভিকটিম ভাংচুর করে। ভিকটিম হিমু বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে রুমের বাহরে থেকে একটি মই এনে রুমের সিলিং ফ্যান লাগানোর লোহার সাথে পূর্ব থেকে বেঁধে রাখা প্লাস্টিকের রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে বলে তাকে জানায়।

গ্রেফতারকৃত আরও জানায়, ভিকটিম হিমু পূর্বেও ৩/৪ বার আত্মহত্যা করবে বলে জিয়াউদ্দিনকে জানালেও সে পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেনি। এবারও পূর্বের ন্যায় ভিকটিম আত্মহত্যা করার ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিনকে জানালে সে বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। কিন্ত ভিকটিম হিমু একটু পর বেধে রাখা রশি দিয়ে গলায় ফাঁস দিলে গ্রেফতারকৃত জিয়াউদ্দিন তাকে নামানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এসময় সে পাশের রুমে থাকা ভিকটিম হিমুর মেকআপ আর্টিস্ট মিহিরকে ডেকে আনে। পরবর্তীতে মিহির রান্নাঘর থেকে একটি বটি এনে রশি কেটে তাকে নিচে নামায়। পরবর্তীতে জিয়াউদ্দিন, বাসার দারোয়ান এবং মিহিরের সহায়তায় হিমুকে বাসা থেকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিথর হিমুকে উত্তরার আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় প্রেমিক জিয়াউদ্দিন ও মেকআপ আর্টিস্ট মিহির। তখনই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপরই হিমুর মোবাইল ফোনসহ গায়েব হন জিয়াউদ্দিন।
পুলিশের ধারণা অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন। হুমায়রা হিমুর মরদেহ সুরতহালের পর ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
একুশে সংবাদ/এসআর
আপনার মতামত লিখুন :