সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) সকাল ১০টায় বাংলা প্রথম পত্রের মাধ্যমে শুরু হয় পরীক্ষা।
রাজধানীসহ দেশের নানা কেন্দ্রে সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নির্ধারিত সময়ের আগেই পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নির্ধারিত শৃঙ্খলায় প্রবেশ করে। অনেক শিক্ষার্থীর মুখে ছিল মাস্ক, হাতে স্যানিটাইজার এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসামগ্রী।
এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মোট ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১০ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি, মাদ্রাসা বোর্ডে ৮৬ হাজারের অধিক এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৯ হাজারের বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৮২ হাজার কমেছে।
সুষ্ঠু ও নিরাপদ পরিবেশে পরীক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে নেওয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। প্রশ্নফাঁস রোধ, জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব প্রতিরোধে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। পরীক্ষার সময় দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, শুধু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্ধারিত মডেলের মোবাইল ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনাও জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পরীক্ষা শুরুর অন্তত ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ, ওএমআর ফরমে সঠিকভাবে তথ্য পূরণ, উত্তরপত্র না ভাঁজ করা, সাধারণ ক্যালকুলেটর ব্যবহার এবং প্রতিটি অংশে উপস্থিতি স্বাক্ষর করা বাধ্যতামূলক। তত্ত্বীয়, এমসিকিউ এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় আলাদাভাবে পাস করতে হবে। পরীক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা পরিচালনায় ৩৩টি নির্দেশনা জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে—প্রতি ২০ জন পরীক্ষার্থীর জন্য একজন কক্ষ পরিদর্শক রাখতে হবে এবং পরীক্ষার্থীদের তিন ফুট দূরত্বে বসাতে হবে। প্রশ্নপত্র নির্ধারিত সেট অনুযায়ী খোলা ও অব্যবহৃত সেট যথাযথভাবে ফেরত পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি স্থাপন, পোস্টার লাগানো এবং জনসচেতনতা তৈরিতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পরীক্ষাকেন্দ্র পরিদর্শনে আজ সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে ভাসানটেক সরকারি কলেজে যান শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার। এরপর তিনি সরকারি বাংলা কলেজ কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে মাস্ক পরা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভ্রাট রোধে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে শুধুমাত্র এনালগ ঘড়ি ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও থাকবে বাড়তি নজরদারি, কেউ পরীক্ষার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
লিখিত পরীক্ষা চলবে ১০ আগস্ট পর্যন্ত, এরপর ১১ থেকে ২১ আগস্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা। রুটিন অনুযায়ী, বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস, ফিন্যান্সসহ বিভিন্ন বিষয়ের পরীক্ষা নির্ধারিত সময় অনুযায়ী নেওয়া হবে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা এবং বিকালে ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুটি শিফটে পরীক্ষাগুলো হবে। প্রয়োজন হলে বোর্ড পরীক্ষার সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে পারবে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে