বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার না গঠানো পর্যন্ত ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এই বার্তা জানানো হয় বলে জানা গেছে।
প্রায় ৮০ কোটি ডলার সমপরিমাণ ষষ্ঠ কিস্তি চলতি ডিসেম্বরেই ছাড় হওয়ার কথা ছিল। তবে আইএমএফ জানিয়েছে, চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা ও নতুন সরকারের নীতিগত অবস্থান স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড়ের অনুমোদন দেওয়া হবে না।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,“নির্বাচনের আগে কিস্তি ছাড়ে আইএমএফ আগ্রহী নয়। তবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রয়েছে, ডলারের বাজারও নিয়ন্ত্রণে আছে। আইএমএফের সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ হলেও দেশের অর্থনীতি এখন নিজস্ব সক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে।”
অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন,“আইএমএফের শর্ত কঠোর হলে বাংলাদেশ তা মানবে না। দেশের অর্থনীতি এখন অতটা সংকটে নেই।”
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, নির্বাচনের প্রাক্কালে আইএমএফ সংস্কার বাস্তবায়নে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে চায়। ঋণ স্থগিত রাখার মাধ্যমে তারা নতুন সরকারের কাছ থেকে পুনঃপ্রতিশ্রুতি নিতে আগ্রহী।
এর আগেও, ২০০১ সালে নির্বাচনপূর্ব সময়ে আইএমএফ একই ধরনের কৌশল নিয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে তেলের দাম ও মুদ্রানীতিতে কঠোর শর্ত আরোপের মাধ্যমে সরকারকে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে যেতে বাধ্য করেছিল, যার ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।
ঋণের ষষ্ঠ কিস্তি সংক্রান্ত শর্ত পর্যালোচনার জন্য ২৯ অক্টোবর আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসবে। তারা দুই সপ্তাহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শেষে মূল প্রতিবেদন দাখিল করবে, যা কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২১৪ কোটি ডলারে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবণতা রয়েছে এবং আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে আছে। চলতি হিসাবে ঘাটতিও নেই।
২০২২ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চায় বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সংস্থাটি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে, যা পরে ৫৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। ইতিমধ্যে পাঁচ কিস্তিতে ৩৬০ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।
একুশে সংবাদ/এ.জে