গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় শ্রী শ্রী লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে শুরু হয়েছে দক্ষিণ বাংলার সর্ববৃহৎ বিলবাঘিয়া এলাকার আড়াইশো বছরের ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এ নৌকা বাইচ চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। বিলবাঘিয়ার কালিগঞ্জ বাজারসংলগ্ন খালে কালিগঞ্জ থেকে বুরুয়া বড় ব্রিজ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জলপথে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ প্রতিযোগিতা।
নৌকা বাইচ দেখতে সকাল থেকেই খালের দুই পাড়ে হাজারো দর্শনার্থীর ভিড় জমে। তুমুল উৎসবমুখর পরিবেশে চলে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিযোগিতা।
নৌকা বাইচে অংশ নেওয়া উল্লেখযোগ্য দলগুলোর মধ্যে রয়েছে—বাছাড়ি, জয়নাগরি, কোষা, টালী ও ছান্দী। গোপালগঞ্জ, কোটালীপাড়া, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা অংশ নিচ্ছে প্রতিযোগিতায়। প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে চলে উত্তেজনাপূর্ণ এই প্রতিযোগিতা।
টিকারা, কারা ও কাশির বাদ্যের তালে তালে উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পর মাঝি-মাল্লারা জারি, সারি ও ভাটিয়ালি গেয়ে গেয়ে ফিরে যান নিজেদের ঠিকানায়।
নৌকা বাইচ উপলক্ষে খালের দুই পাড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। সেখানে মনোহরী, খেলনা, চানাচুর, ছবির দোকান, নাগরদোলা ও কাশাপাতার পাখার দোকানসহ নানা রকম পসরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। সব মিলিয়ে উৎসবটি পরিণত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের এক মিলনমেলায়।
নৌকা বাইচ দেখতে আসা দর্শনার্থী সুমন বিশ্বাস বলেন, “শৈশব থেকে শুনে আসছি বিলবাঘিয়ার নৌকা বাইচের খ্যাতির কথা। এবার এসে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি—এতো মানুষ, এতো উৎসবমুখরতা আগে কখনো দেখিনি।”
স্থানীয় তরুণী লাবনী বর্ণিক বলেন, “আমাদের এলাকায় এই নৌকা বাইচ প্রায় আড়াইশ বছর ধরে চলে আসছে। এবছরও দারুণ আয়োজন হয়েছে। আমি প্রতিদিন এসে প্রতিযোগিতা উপভোগ করছি।”
গোপালগঞ্জ থেকে আসা দর্শক হেমন্ত বিশ্বাস কৃষ্ণ বলেন, “এ বছর লোকজন ও দোকানপাট অনেক বেশি। পরিবারসহ এসে বিকেলটা আনন্দে কাটালাম।”
কলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, “কোটালীপাড়ার কালিগঞ্জের নৌকা বাইচ এখনো তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এটি কারও ব্যক্তিগত আয়োজনে নয়, বরং স্থানীয়দের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে হয়। বিশ্বকর্মা পূজা উপলক্ষে একদিন এবং লক্ষ্মীপূজায় তিন দিনব্যাপী এ বাইচ অনুষ্ঠিত হয়।”
নৌকা বাইচের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
একুশে সংবাদ/এ.জে