বিশ্ব শিক্ষক দিবস—এ দিনটি শুধু শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়, বরং সমাজ ও সভ্যতা গড়ার মহান কারিগরদের অবদান স্মরণ করার দিন।
শিক্ষক আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পথপ্রদর্শক। বাবা-মা জীবনের শুরুটা শেখান, কিন্তু প্রকৃত মানুষ বানানোর কাজটি করেন শিক্ষক। এজন্যই তাঁকে বলা হয় "মানুষ গড়ার কারিগর"।
১৯৯৫ সাল থেকে ৫ অক্টোবর তারিখে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে "বিশ্ব শিক্ষক দিবস"। বর্তমানে বিশ্বের শতাধিক দেশে এই দিবস উদযাপিত হয়। ইউনেস্কো বলেছে—শিক্ষা ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শিক্ষকদের অবদান অসামান্য।
শিক্ষক শুধু পাঠ্যসূচি পড়ান না, তিনি আমাদের জীবনের প্রথম নায়ক হয়ে ওঠেন। যাঁরা মানবিক গুণাবলি, সদাচরণ ও আদর্শ জীবনের শিক্ষা দেন, তাঁরাই সত্যিকারের প্রিয় শিক্ষক।
ইসলাম শিক্ষা ও জ্ঞানের গুরুত্বকে বিশেষভাবে রেখেছে। কোরআনের প্রথম আয়াতেই এসেছে "পড়ো, তোমার প্রভুর নামে"। বিশ্বনবী (সা.) ঘোষণা করেছেন:"প্রত্যেক নর-নারীর ওপর বিদ্যা অর্জন করা ফরজ।"
আদর্শ শিক্ষকই সমাজকে আদর্শ পথে পরিচালিত করতে পারেন। এজন্য শিক্ষকতা আজও এক মহৎ পেশা। নবী (সা.) নিজেকে বলেছেন—“আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” শিক্ষার্থীর প্রতি তার মমতা ছিল পিতার মতো, আবার আদর্শের শিক্ষা দিতেন নিঃস্বার্থভাবে।
আমার কাছে শিক্ষকতার গুরুত্ব আরও গভীর, কারণ আমার নিজের বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক—মরহুম আলহাজ্ব কে. এম. আবদুল করিম। তিনি ছিলেন খিলগাঁও মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, খিলগাঁও মডেল হাই স্কুল ও কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, এবং বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাজাপুর থানার সাতুরিয়া হামিদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন তিনি।
তিনি শুধু প্রতিষ্ঠানই গড়েননি, ব্যক্তিগতভাবে গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, আদবকায়দা ও ইবাদতের ব্যাপারে তিনি ছিলেন দৃঢ়। বাবা আমাদের প্রতিদিন ভোরে জাগিয়ে পড়াশোনায় বসাতেন, নামাজ পড়াতেন। আমাদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন—আজও সেটিই আমার জীবনের মূল শক্তি।
বাবা মানেই ছায়া, নিরাপত্তা, নির্ভরতা। কঠোর শাসনের আড়ালে বাবার ভালোবাসা ছিল অগাধ। শাসনের মধ্যেও ছিল স্নেহের অবারিত ছায়া। তিনি ছিলেন আমাদের জন্য বটবৃক্ষের মতো।
আজও বাবার কথা মনে হলে চোখ ভিজে যায়। মনে হয়, আদর্শ নাগরিক গড়ার যে স্বপ্ন তিনি বুনেছিলেন, আমি কি তার যোগ্য উত্তরসূরি হতে পেরেছি?
আমার বাবা শুধু একজন শিক্ষক ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক আদর্শ সমাজসেবক, দানবীর, ধর্মীয় নেতা, এবং একজন মহৎ মানুষ। ২০১৬ সালের ১১ নভেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তবে তাঁর শিক্ষা, আদর্শ আর স্বপ্ন এখনো আমাদের পথ দেখায়।
হে আল্লাহ, আমার বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দিন।
এই লেখাটি আমি বাবার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখলাম, বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে।
লেখক: ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম
একুশে সংবাদ/এ.জে