AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রোপা আমন গাছে বালাইনাশকেও কাজ হচ্ছে না, ফলন নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষকরা


Ekushey Sangbad
আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই, জয়পুরহাট
০৭:৫২ পিএম, ৩ অক্টোবর, ২০২৫

রোপা আমন গাছে বালাইনাশকেও কাজ হচ্ছে না, ফলন নিয়ে অনিশ্চয়তায় কৃষকরা

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে ধান খেতে ভয়াবহভাবে দেখা দিয়েছে গোড়া পচা রোগ। নামকরা বিভিন্ন কোম্পানির বালাইনাশক ও পচনরোধক স্প্রে করেও থামছে না রোগের সংক্রমণ। মাঠপর্যায়ে কৃষকরা প্রতিদিন রোগ মোকাবিলায় লড়াই করলেও ফলাফল শূন্য। এ অবস্থায় ধানক্ষেত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

কৃষকরা জানান, সপ্তাহে দুই-তিনবার স্প্রে করার পরেও কোনো উপকার মিলছে না; বরং খরচ বাড়ছে, আর গাছ শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় তাদের মুখে উদ্বেগ আর হতাশার ছাপ স্পষ্ট।

গত মৌসুমে হিমাগারে আলু রেখে বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়েছিলেন কালাইয়ের কৃষকরা। সেই ক্ষতির ঘা শুকাতে না শুকাতেই আমন মৌসুমেও একই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মারাত্মক শঙ্কায় রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, “এবার যদি ধান থেকেও লোকসান হয়, তাহলে হয়তো আর ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো উপায় থাকবে না, সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো।”

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আমনের খেতে ব্যাপক হারে খোল পচা বা গোড়া পচা রোগে গাছ কুকড়ে গেছে, পাতাগুলো হলদে হয়ে ঝুলে পড়েছে। কৃষকরা জমিতে দাঁড়িয়ে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন, কিন্তু রোগের বিস্তার অব্যাহত।

আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা মাঠে কয়েকজন হতাশ কৃষক জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে একটানা বৃষ্টির পর থেকেই রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথমে কিছু জমিতে দেখা দিলেও এখন তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে পুরো এলাকায়। প্রতিদিন স্প্রে করেও কোনো উন্নতি নেই, বরং রোগের প্রকোপ বাড়ছে।

হারুঞ্জা গ্রামের কৃষক ফেরদাউস বারী বলেন, “আমাদের সারা বছরের সংসার চালানোর ভরসা হলো আমন ধান। কিন্তু গাছের গোড়া পচে যাওয়ায় এবার সে আশাও ধূলিসাৎ হতে বসেছে। ধান না পেলে আলুর মাঠে কাজ করবো কিভাবে? ঘরে খাবার থাকবে না, আবার পরবর্তী ফসলের খরচও জোগাড় করা সম্ভব হবে না।”

এলতা গ্রামের কৃষক মোকারম হোসেন জানান, সাত বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। নিয়মিত পরিচর্যা করেও রোগ ঠেকাতে পারছেন না। “স্প্রে করার খরচে প্রতিদিন টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এভাবে চললে সব শেষ হয়ে যাবে,”—বললেন তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে কালাই উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশেই ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হারুনুর রশিদ জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণেই এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দিনের বেলা অতিরিক্ত রোদ ও রাতে হালকা কুয়াশার ফলে জমিতে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার পরিবর্তন রোগ ছড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। এছাড়া নিচু জমিতে পানি জমে থাকায় ছত্রাক সহজেই সংক্রমণ ঘটাতে পারছে। তিনি বলেন, “অনেক কৃষক নিয়ম মেনে ও সঠিক পদ্ধতিতে স্প্রে না করায় সমস্যাটা আরও বেড়েছে। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সঠিকভাবে স্প্রে করার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছে।”

তবে কৃষকদের অভিযোগ, নিয়ম মেনে স্প্রে করলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না। দিন শেষে শুধু খরচ বাড়ছে, লাভ তো দূরের কথা, ধানের চারা পর্যন্ত বাঁচাতে পারছেন না। কৃষকদের মুখে এখন একটাই কথা—“আমনও যদি আলুর মতো শেষ হয়, তাহলে আর ফিরে দাঁড়ানোর কিছুই থাকবে না।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!