পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর এক মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এর প্রভাব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে পার্বত্য তিন জেলায়।
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি থেকে ছেড়ে যাওয়া একমাত্র দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস শান্তি পরিবহনসহ সকল প্রকার যোগাযোগ টানা চার দিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
বাঘাইছড়ি সদরস্থ শান্তি পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার গিয়াস উদ্দিন নাছির জানান, স্বাভাবিক নিয়মে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি-মারিশ্যা রুটে প্রতিদিন ৮-১০টি শান্তি পরিবহন বাস চলাচল করে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় অতি উৎসাহী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল পরিবহন, চালক ও যাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরে পরিবহন মালিক সমিতি পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
যদিও ঘটনাটির সূত্রপাত খাগড়াছড়ির গুইমারায়, তবে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে পুরো পার্বত্য অঞ্চলে। ভৌগোলিক কারণে তিন পার্বত্য জেলা—রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান—যাতায়াত, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। আয়তনের দিক থেকে দেশের বৃহত্তম উপজেলা বাঘাইছড়ি রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত হলেও দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যতীত প্রায় সবক্ষেত্রে খাগড়াছড়ির ওপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে এখানকার বিশাল জনগোষ্ঠীর যাতায়াত ও চিকিৎসার জন্য খাগড়াছড়িই সবচেয়ে সহজ ভরসাস্থল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবুও উগ্র স্বার্থান্বেষী একটি গোষ্ঠীর চক্রান্তে পার্বত্য অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। চলমান অবরোধ-হরতালের কারণে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। মনে হচ্ছে, যেকোনো মূল্যে অরাজকতা সৃষ্টি করে পার্বত্য অঞ্চল থেকে শুরু করে সারা দেশে অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
বাঘাইছড়ির সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এমনকি খাদ্য সরবরাহেও দেখা দিয়েছে সংকটের আশঙ্কা। দেশের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলো এ অঞ্চলে অবস্থিত হলেও বর্তমানে আটকে পড়া পর্যটকরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
এ অবস্থায় স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী সমাধান ছাড়া এ সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে দাঙ্গা উসকে দেওয়াদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে পার্বত্য অঞ্চলকে শান্ত ও নিরাপদ রাখা এখন সময়ের দাবি।
একুশে সংবাদ/এ.জে