AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী
কাতি গেলো আগুন আইলো

হারাতে বসা মাদারগঞ্জের আগুন খেলা আবারও জ্বলে উঠল মোসলেমাবাদে


Ekushey Sangbad
সাইফুল, মাদারগঞ্জ, জামালপুর
১২:১৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫

হারাতে বসা মাদারগঞ্জের আগুন খেলা আবারও জ্বলে উঠল মোসলেমাবাদে

জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার গুনারীতলা ইউনিয়নের মোসলেমাবাদ গ্রামটিতে গতরাতে যেন ফিরে এসেছিল বহু পুরোনো এক সময়। কার্তিক মাসের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে গ্রামবাসী পালন করল তাদের শেকড়-সন্ধানী লোকউৎসব— ‘আগুন খেলা’। আধুনিকতার তীব্র ধাক্কায় যেখানে অনেক লোকজ সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে এই ছোট্ট আয়োজন যেন গ্রামবাসীর মনে নতুন করে জাগিয়ে দিল অতীতের রঙিন স্মৃতি।

লোকমুখে প্রচলিত ছড়া— “কাতি গেলো আগুন আইলো, পুটি মাছ দেওরো পইলো।”

ছড়াটি যেন শুধু কাতি মাসের সমাপ্তির বার্তা নয়, বরং গ্রামের মানুষের হৃদয়ে দোল দিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যের এক বিশেষ ডাক। কাতি মাস মানেই আগুন উৎসবের আলো, উল্লাস, আর গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়া এক অদ্ভুত রহস্যময় উত্তেজনা।

উৎসবের রাতে মোসলেমাবাদ যেন আলো-আগুনের নাট্যমঞ্চ। কচিকাঁচাদের হাতে জ্বলন্ত খড়-বাঁশের মশাল; কেউ লম্বা কঞ্চি দোলাচ্ছে, কেউবা গোল পাকিয়ে ঘুরাচ্ছে আগুন। আগুনের লালচে আভা আকাশে দোল খায়, আর সেই আলোয় দেখা যায় উল্লাসে ভরা হাসিমুখ। বাতাসে ভেসে আসে কিশোরদের দৌড়ঝাঁপের শব্দ, বয়োজ্যেষ্ঠদের গল্প, আর আগুনের টুকটুক শব্দ—সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয় এক মায়াবী আবহ।

গ্রামের প্রবীণরা বলেন, এই খেলাটির বয়স শত বছরেরও বেশি। তখন বিদ্যুতের আলো ছিল না, ছিল না বিনোদনের আধুনিক মাধ্যম। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতেন—আগুন জ্বালানো মানে অশুভ শক্তিকে দূরে রাখা, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকা, আর নতুন মৌসুমকে বরণ করে নেওয়া। সেই বিশ্বাস থেকেই শুরু হয়েছিল আগুন খেলা; পরে তা পরিণত হয় গ্রামবাসীর উৎসব আর মিলনমেলায়।

কিন্তু সময়ের স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। আধুনিক প্রযুক্তির ঝলমলে যুগে এই আগুন খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। অনেক পরিবারই এখন সন্তানদের আগুন নিয়ে খেলতে দিতে চান না। ফলে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে এসেছে এই লোকউৎসবের আগুন।

তবুও মোসলেমাবাদের গতরাতের আয়োজন দেখে মনে হয়েছে—গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে পুরোপুরি নিভিয়ে দেওয়া এত সহজ নয়। আগুনের আলোয় যে হাসিমুখগুলো দেখা গেল, যে উচ্ছ্বাসে ভরে উঠল মাঠ-ঘাট—তা যেন ঘোষণা দিল, যতদিন গ্রামের মানুষ তাদের শেকড়কে আঁকড়ে ধরে আছে, ততদিন আগুন খেলার মতো উৎসবগুলো বেঁচে থাকবে।

গ্রামীণ জীবনের রঙ, আগুনের উষ্ণতা, মানুষের হাসি-কান্না আর মিলনমেলার আবেগ নিয়ে শেষ হলো মোসলেমাবাদের কাতি মাসের আগুন উৎসব। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ঐতিহ্য কি আগামী প্রজন্মকে ছুঁতে পারবে? নাকি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাবে আগুনের মতোই ক্ষণস্থায়ী আলো হয়ে?

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!