শতবর্ষের ঐতিহ্যকে ধারণ করে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা শান্দার পাড়ায় জমে উঠল ‘ভেলা ভাসানি উৎসব’। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা গ্রামীণ সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশটি এবারও বেদে সম্প্রদায়ের আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়েছে। ভাদ্র মাসের শেষ বৃহস্পতিবার রাতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে বসে গ্রামীণ মেলা, আর হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, নদী ও পানিকে ঘিরেই যাযাবর বেদে সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রা গড়ে উঠেছে। ভেসে বেড়ানো এই জনগোষ্ঠীর কাছে পানি কেবল জীবিকা নয়, বরং শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। সেই শ্রদ্ধা থেকেই শত বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা পালন করে আসছে ভেলা ভাসানি উৎসব। কারও কাছে এটি মানত পূরণের আয়োজন, আবার কারও কাছে এটি ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এক অনন্য সুযোগ।
উৎসবকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় আমেজ। ঝিটকা শান্দার পাড়ার আশপাশে বসে হাট ও মেলা। সেখানে খাবার, খেলনা, দেশীয় মিষ্টি, মাটির তৈজসপত্র ও লোকজ দ্রব্য নিয়ে বসেন গ্রামীণ ব্যবসায়ীরা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মানুষের ভিড়।
বেদে সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা গান ও বাদ্যযন্ত্রের তালে পরিবেশন করেন লোকসংগীত ও আধ্যাত্মিক গান। তাদের পরিবেশনায় ভেসে ওঠে নদীমাতৃক বাংলার ঐতিহ্যের সুর। এরপর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান—ভেলা ভাসানো। কলাগাছ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি ভেলায় সাজানো হয় মোমবাতি, ফুল, ফল-ফলাদি এবং মানতের সামগ্রী। প্রার্থনার সুরে, আলোকিত মোমবাতির আলোয় যখন ভেলাগুলো নদীতে ভেসে যায়, তখন উপস্থিত দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হয়ে দেখেন এই শতবর্ষী রীতির সৌন্দর্য।
স্থানীয়রা জানান, বহু আগে থেকেই এই অঞ্চলের বেদেরা নদীকে কেন্দ্র করেই জীবনযাপন করে আসছে। তাদের কাছে পানির প্রতি রয়েছে গভীর আস্থা ও শ্রদ্ধা। সেই বিশ্বাস থেকেই ভেলা ভাসানি উৎসবের জন্ম, যা আজও টিকিয়ে রেখেছে বেদে সম্প্রদায়।
দর্শনার্থীরা বলেন, শতবর্ষের এই ঐতিহ্য সরাসরি দেখতে এসে ভিন্নরকম অনুভূতি হয়েছে। এখন আর কোথাও তেমন মেলা হয় না, তাই এই মেলা আরও জমজমাট হয়ে ওঠে।
আয়োজক আবু তালেব জানান, বহু বছর ধরেই তারা এ উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও আয়োজনকে আরও বর্ণিল করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ এতে অংশ নিয়েছেন।
একুশে সংবাদ/মা.প্র/এ.জে