বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
শুক্রবার সকাল থেকেই জোয়ারের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন, কালাইয়া ইউনিয়নের চরকালাইয়া, শৌলা, নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদি এবং কাছিপাড়া ইউনিয়নের একাধিক গ্রামীণ জনপদ।
বিশেষ করে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাংশে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। দক্ষিণ চরওয়াডেলের খানকা বাজার থেকে হাওলাদার বাড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ কাঁচা রাস্তাটি একাধিক স্থানে ভেঙে প্লাবিত হয়েছে। পশ্চিম অংশে বাতির খাল থেকে ধানেচ রাড়ির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। উত্তরে আমির বেপারীর বাড়ি থেকে মমিন বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত পাকা রাস্তাও পানির নিচে চলে গেছে। মাস্টার বাড়ি থেকে পশ্চিম মিয়াজান বাজার পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। চর রায়েসাহেব খেয়াঘাট এলাকা সম্পূর্ণভাবে প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা জালাল গাজী বলেন, “প্রতি বছর বর্ষায় এমনটা হয়। সরকার চাইলে এর স্থায়ী সমাধান দিতে পারে, কিন্তু সদিচ্ছার অভাবেই কিছুই হচ্ছে না। আমরা যারা নদীর পাড়ে থাকি, তাদের জন্য পাইলিং, ব্লক ও বেরিবাঁধ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
অভিযোগ করে স্থানীয় শাহআলম রাড়ি বলেন, “অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে প্রতি বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না, বই-খাতা ভিজে যায়, খাবার পানি ও চলাচল পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। প্রতিটি দিন যেন যুদ্ধ।”
চরকালাইয়া, শৌলা, নিমদি ও কাছিপাড়া ইউনিয়নের গোপালিয়া, বাহের চর ও কারখানা এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অঞ্চলের নিচু এলাকায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কাছিপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইয়াকুব আলী রুবেল বলেন, “প্রতি বছর পানি বাড়লেই এসব নিচু অঞ্চল তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট ভেঙে গেছে, জরুরি সেবা নেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বহুবার বলেছি, কিন্তু কোনো টেকসই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখন শুধু সহানুভূতির কথা নয়, চাই স্থায়ী বাঁধ।”
চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল বসার বলেন, “এই সময় নদীর পানি সাধারণত বাড়ে, তবে এবার অনেক বেশি বেড়েছে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ ও রাস্তাগুলো মেরামত না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম বলেন, “নিম্নচাপের ফলে প্লাবিত এলাকা নিয়ে কাজ করছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সরকারি অনুদান দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। নদীতীরবর্তী এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জোয়ার ও ঝড়ো হাওয়া ২৫ জুলাই সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে এবং নদীতীরবর্তী অঞ্চলে ১ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। স্থানীয়দের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
একুশে সংবাদ/প.প্র/এ.জে