রাজশাহীর তানোর পৌর শহরের গোকুল মথুরা দাখিল মাদরাসার সামনে ফুটবল মাঠের পাশে নতুন একটি ভবন নির্মাণে বাধা দিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীর একাংশ বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত সোমবার (২৩ জুন) দুপুর ১২টার দিকে মাদরাসার সামনে নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে মাটি কাটার সময়ে ফুটবল খেলার মাঠ রক্ষার দাবিতে স্থানীয় বেশকিছু এলাকাবাসী বাধা দেয়। পরে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করা হলেও শেষে ভবন নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসেন খান, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলা সহকারী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সালামসহ উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশের সদস্যরা এলাকাবাসী এবং মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। তবে ঘটনাস্থলে স্থানীয় বিএনপি-জামায়াতের বেশকিছু নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকলেও তারা অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করেন।
স্থানীয় লোকজন ও মাদরাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে গোকুল মথুরা মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরেই সেখানে পর্যায়ক্রমে পাকাঘর নির্মাণ করে পড়াশুনা শুরু করে ওই এলাকার শিক্ষার্থীরা। ২০২৩/২৪ অর্থবছরে ওই মাদরাসাটির বর্তমান ভবনের সামনে মাঠের পূর্ব-উত্তর কর্নারে প্রায় ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি চারতলা ভবনের বরাদ্দে নির্মাণকাজ হাতে নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ওই ফুটবল মাঠ রক্ষার দাবি তুলে ওই স্থানে মাদরাসা ভবন নির্মাণে বাধা দেয় স্থানীয় বেশকিছু এলাকাবাসী। জটিলতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয়ভাবে বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমাধান হয়নি। দুইপক্ষই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। এমতাবস্থায় ২৩ জুন সকালে মাদরাসার সামনে নতুন ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে মাটি কাটার সময়ে বাধার মুখে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় মাঠ কর্তৃপক্ষের পক্ষে স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি রুবেল হোসেন মিন্টু বলেন, এই মাঠের প্রায় ৪০ শতাংশ দখল করে স্থানীয় গোকুল-মথুরা দাখিল মাদরাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে চারতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদার ওই মাঠে নির্মাণ সামগ্রী ফেলেছেন। গত ১৪ এপ্রিল স্থানীয় বেশকিছু এলাকাবাসী ওই মাঠে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। পরদিন তানোর থেকে রাজশাহী জেলা পরিষদ কার্যালয় অভিমুখে তারাই লংমার্চ করেন। একই দিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিও পালন করা হয় এবং জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। একই দাবিতে ২৫ মে রাজশাহীতে গোকুল-মথুরা ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে স্থানীয় ‘স্বপ্নচারী যুব উন্নয়ন সংস্থা’ ও ‘ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ–ইয়্যাস’ যৌথভাবে রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
এমনকি ২ জুন মাঠের পক্ষ থেকে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মথুরা ফুটবল ক্লাবের সভাপতি ও বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় একটি মামলা করেন। আদালত প্রতিপক্ষের জবাব দাখিল পর্যন্ত অন্তর্রর্তী নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ১৮ জুন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ আদালতে জবাব দাখিল করেন। মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে আগামী ১০ জুলাই। কিন্তু এর আগেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শুরু করেছিল বলে দাবি করেন তিনি।
তবে মাদরাসার সুপারিনটেনডেন্ট মাওলানা আবদুল হামিদ এই প্রতিবেদককে জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ও সকল নিয়ম মেনেই আজ (সোমবার) সকালে মাদরাসার নতুন ভবন নির্মাণকাজ শুরু করলে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে এসেছি, তার পরামর্শ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে আজকের এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গোকুল মথুরা মাদরাসার সামনে নতুন একটি ভবন নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন শেষে মাটি কাটার সময়ে খেলার মাঠ রক্ষার দাবি নিয়ে স্থানীয় বেশকিছু এলাকাবাসী বাধা দেয়। বর্তমানে কাজ বন্ধ রয়েছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকাত সালমান বলেন, তিনি কাগজপত্র দেখেছেন। ঊর্ধ্বতন স্যারদের নির্দেশনা ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে