একসময় গ্রামীণ রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ত সারি সারি গরু ও মহিষের গাড়ি। যানবাহনের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় সেসময় এসব গাড়িই ছিল মানুষের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের প্রধান ভরসা। বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে জমির ধান বহন কিংবা চাষের কাজে, গরু ও মহিষের গাড়িই ছিল কৃষকের নির্ভরযোগ্য বাহন।
কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন হারিয়ে যাচ্ছে এসব গাড়ির ব্যবহার। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ এখন সহজেই কৃষিকাজ করতে পারছে। ফলে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি আর চোখে পড়ে না বললেই চলে।
দুই যুগ আগেও গরু-মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ বিয়ের বাড়িতে যেত। এমনকি এই বাহন ছাড়া বিয়ের পরিবহন কল্পনাও করা যেত না। সে সময় গাড়ির চালককে বলা হতো “গাড়িয়াল”। এখন সেই পেশাও প্রায় বিলুপ্তির পথে।
জানা যায়, একসময় গ্রামীণ যোগাযোগে গরু-মহিষের গাড়িই ছিল প্রধান ভরসা। হাঁটার যুগ শেষে মানুষ যখন পশুকে পরিবহনের কাজে ব্যবহার শুরু করে, তখন থেকেই এসব গাড়ি হয়ে ওঠে মানুষের চলাচল ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। গ্রামে গ্রামে পাকা সড়ক, সঙ্গে দ্রুতগতির নছিমন, করিমন, ভুটভুটি ইত্যাদির কারণে পশু-চালিত বাহনের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। গরু-মহিষের গাড়ি তৈরির কারিগরও এখন আর সহজে মেলে না। একটি গাড়ি বানাতে খরচ পড়ে ২০ হাজার টাকার বেশি। শুধু দু’চাকার দামই প্রায় ১৫ হাজার টাকা। আবার দুটি বলদ গরুর দাম ১ থেকে দেড় লাখ টাকার মতো। সঙ্গে যোগ হয় খাবার, পরিচর্যা ও পালনের নানা খরচ।
ফলে বর্তমানে কেউ আর নতুন করে গরু-মহিষের গাড়ি বানাতে আগ্রহী নন।
তবে ব্যতিক্রম একজন—গাড়িয়াল আলতাফ আলী। তিনি এখনও মহিষের গাড়িতে খড় বহন করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এ কাজে নিয়োজিত। খড় কিনে গাড়িতে করে বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দেন। তিনি বলেন, “এখন যান্ত্রিক যুগে কেউ তেমন গরু-মহিষের গাড়ি ব্যবহার করেন না। আমি শুধু ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি।”
আলতাফ আলীর মতো হাতে গোনা কয়েকজন মানুষ আজও বহন করে চলেছেন গ্রামীণ বাংলার এক বিস্মৃতপ্রায় ঐতিহ্য।
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে