ঢাকার ধামরাইয়ে একই রাতে এক গ্রামের দুটি মন্দিরে দেবী প্রতিমা বিবস্ত্র ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৭ জুন) উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের গাংগুটিয়া এলাকায় দুটি মন্দির পরিদর্শন করেছে ধামরাই থানা পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার দিবাগত রাতে গাংগুটিয়া দক্ষিণ পাড়ার কালী মন্দির ও হরিসভা পঞ্চায়েত কমিটির অধীন শীতলা মন্দিরে এই ঘটনা ঘটে।
দক্ষিণ পাড়া কালী মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ছাউনি দেওয়া ও খোলা একটি ঘরে থাকা কালী প্রতিমার গায়ে কোনো পোশাক নেই। মেঝেতে পড়ে রয়েছে ছিন্নবস্ত্র। প্রতিমার গলার মুণ্ডমালা, হাতের অস্ত্র ও মাথার চূড়া নেই। পায়ের নিচে থাকা শিব প্রতিমার ত্রিশূলও লুট করা হয়েছে। কালী প্রতিমার পায়ের কিছু অংশে ফাঁটলও দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা শিবানী রানী দাস বলেন, “সকালে প্রণাম করতে আসি, এসে দেখি মায়ের গায়ে বস্ত্র নাই। বড় একটা ত্রিশূল ছিল, গায়ে কাপড় ছিল, কিছুই নাই। এরকম কোনো দিন ঘটেনি, কিভাবে ঘটলো। গলার মালা, দেবতার হাতের রাম দা, মায়ের মাথার চূড়া নিছে, গলায় মাথার মুণ্ডুর কুন্ড থাকে, সেটা ভেঙে ফেলেছে।”
গাংগুটিয়া দক্ষিণ পাড়া সার্বজনীন কালী মন্দির কমিটির সভাপতি ডা. মনতোষ চন্দ্র দাস বলেন, “সকালে ভক্তি করতে এসে দেখি প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। বিষয়টা থানায় জানাই। তারা এসে তদন্ত করে গেছে। জিডি করার কথা বলেছে। সবাইকে ডেকে বসে সিদ্ধান্ত নিছি কাল জিডি করবো। প্রতিমা গড়তে খরচ গেছে। আগামী মাসে কালী পূজা হবে। তার আগে এমন হলো। সব ভাঙছে। প্রতিমার গায়ের গহনা নিয়েছে। স্বর্ণেরটা খুলে বাড়ি রাখায় নিতে পারেনি। চোখ, নাক, মুখ, হাত ভেঙে ফেলেছে। কাপড় খুলে উলঙ্গ করে ফেলেছে। গায়ে জড়ানো জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। গত ৫০-৬০ বছরে এমন ঘটনা কোনো দিনই ঘটেনি। আমরা মুসলমানদের সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করি। তারা শত্রুতা করার কথা না। প্রাথমিকভাবে কোনো ধারণাও করতে পারিনি।”
অন্যদিকে, শীতলা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের বেড়া ও টিনের ছাউনির নিচে রাখা প্রতিমার বাম হাতে ফাঁটল, মাথার মুকুট খুলে নেওয়া, কান অপসারণ, চুল খোলা ও কোলের কাছে ফুটো করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিমার পোশাক নেই এবং অস্ত্র লুট করা হয়েছে।
গাংগুটিয়া কালী মন্দির হরিসভা পঞ্চায়েত কমিটির আহ্বায়ক স্বদেশ রঞ্জন রায় বলেন, “সোমবার রাত ১০-১১ টা পর্যন্ত ভালো ছিল। রাতে বিদ্যুৎ ছিল না। তখন অজ্ঞাত কিছু লোক এই মন্দিরে এসে শীতলা মায়ের চুল খুলে দেয়। গায়ের কাপড় খুলে নিয়ে যায়। নগ্ন অবস্থা করে রাখে। সকালে উঠে দেখে অত্যন্ত দুঃখ পেয়েছি, ব্যথিত। আমরা চাই এর সঙ্গে জড়িতরা যাতে ধরা পড়ে। তদন্তের মাধ্যমে যাতে সুষ্ঠু বিচার পাই।”
গাংগুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুনীল সাহা বলেন, “রাতে সবাই ঘুমিয়ে ছিল। সকালে উঠে দেখতে পায়, মন্দিরের ঠাকুর ভাঙা হয়েছে। কাপড় নিয়ে গেছে। প্রথমত যারা এটা করেছে, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করি। আমার ধারণা, একটা কুচক্রীমহল, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের যারা প্রেতাত্মা, তারা রাজনৈতিক কোনো খেলা খেলার জন্য করতে পারে। কারণ আমাদের এলাকায় হিন্দু, মুসলমান একত্রে বসবাস করি। এরকম কোনো কিছু, খারাপ কিছু পাইনি। এরকম করার মতো কোনো লোকও নাই। সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ব্যবহারের জন্য কোনো একটা মহল এটা করেছে। এলাকাবাসী এটাই মনে করে।
“এই ঘটনায় আমরা একটু আতঙ্কে থাকার কথাই। রাতের বেলা এরকম অপকর্ম করে যদি চলে যায়। সঠিক বিচার না পাই, যারা সনাতনী রয়েছে, একটা আতঙ্ক থাকেই। আমরা এই সন্ত্রাসী বা যারা এই কাজ করেছে, তাদের সঠিক বিচারের দাবি করছি তদন্তের মাধ্যমে। এটার বিচার যদি না হয়, আমরা সমগ্র সনাতনী ধামরাইবাসী বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।”
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক বার্তায় জানান, “গত রাত ১১টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা কেউ গাংগুটিয়া এলাকার গাংগুটিয়া দক্ষিণপাড়া সার্বজনীন কালী মন্দিরে প্রবেশ করে মুর্তির পরিহিত কাপড় খুলে নিচে ফেলে রাখে। এছাড়া গাংগুটিয়া সার্বজনীন কালী মন্দিরে প্রবেশ করে মুর্তির পরিহিত কাপড় খুলে নিয়ে যায়। মন্দির দুটি পূজা শেষে অরক্ষিত অবস্থায় ছিল। এখানে কোনো মন্দির বা মুর্তি ভাংচুর হয় নাই।”
ঢাকা জেলা পুলিশের সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিনুর কবির বলেন, “গোপনে রাতের বেলা মুর্তি থেকে কিছু কাপড় খুলে রাখা হয়েছে। পুলিশ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছে। আমরা কথা বলেছি। ভাংচুর হয়নি। পুলিশ কাজ করা শুরু করেছে। এটার সঙ্গে কারা জড়িত বা অন্য কোনো কারণ আছে কিনা দেখা হচ্ছে। আইনগত যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, নেওয়া হচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/ঢা.প্র/এ.জে