কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে ঢাকার উপকণ্ঠ ধামরাইয়ের খামারগুলোর প্রস্তুতি। খামারজুড়ে চলছে গরু গোসল, খাওয়ানো, ঠান্ডা বাতাসের ব্যবস্থা—সবকিছুতেই এখন সাজ সাজ রব। সবচেয়ে বড় স্বস্তির বিষয় হলো, এ বছর ভারতীয় গরুর আমদানির শঙ্কা নেই। ফলে দেশি খামারিরা আশাবাদী, কষ্টের সঠিক মূল্য এবার মিলবে।
সকালে ধামরাইয়ের একটি খামারে গিয়ে দেখা গেল, একটি বিশাল ষাঁড় হেলে দুলে হাঁটছে। পাশে দাঁড়িয়ে খামারি মো. আবির হোসেন আবেগে চোখ মুছলেন। বললেন, “এই গরুটাকে যখন কিনি তখন বাচ্চা ছিল। এখন যেন পরিবারেরই একজন সদস্য। অনেক যত্নে বড় করেছি, ঈদের জন্যই তুলে রেখেছি।”
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানায়, এ বছর ধামরাইয়ে কোরবানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে ৫০ হাজার ১৫৯টি গবাদিপশু। অথচ স্থানীয় চাহিদা প্রায় ৩৫ হাজার। ফলে প্রায় ১৫ হাজার পশু অতিরিক্ত থাকবে, যা সরবরাহ করা হবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, “আমরা ধারণা করছি, এবারে ধামরাইয়ে পশু বিক্রি হবে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার, যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি।”
খামারিদের মতে, পশুর সঙ্গে যেমন সময় ও শ্রম জড়িয়ে থাকে, তেমনি গড়ে ওঠে এক ধরনের আবেগ। শিংশ্রী এলাকার সুপ্রিম এগ্রো খামারের ব্যবস্থাপক মো. শামীম হোসেন জানান, “আমাদের খামারে প্রায় ২০০টি গরু রয়েছে। এগুলো আমরা ওজন অনুযায়ী বিক্রি করি—প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। প্রতিদিন লোকজন এসে গরু দেখে যাচ্ছেন।” যদিও খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ, তবুও তিনি আশাবাদী।
গরুর দাম নিয়ে এখনও কিছুটা টানাপোড়েন রয়েছে। গৃহস্থরা বলছেন, ব্যাপারীরা কম দাম বলছেন। আবার ব্যাপারীদের দাবি, অনেক সময় খামারিরা ওজনের তুলনায় বেশি দাম চান। তবে দুপক্ষই স্বস্তিতে আছেন, কারণ এ বছর ভারতীয় গরুর প্রবেশ বন্ধ, ফলে প্রতিযোগিতাও কম।
এবারের কোরবানির পশুর তালিকায় রয়েছে দেশি জাত ছাড়াও ফ্রিজিয়ান, নেপালি, হরিয়ানা ও অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু। অধিকাংশ খামারেই গরু মোটাতাজা করা হয়েছে প্রাকৃতিক উপায়ে, রাসায়নিক বা স্টেরয়েড ছাড়াই।
অনেক খামারি ব্যাংক ঋণ নিয়ে বা জমি বিক্রি করে খামার করেছেন। তাদের প্রত্যাশা, এবারের ঈদে শ্রম ও ত্যাগের উপযুক্ত মূল্য মিলবে। এক খামারি বলেন, “গরু বিক্রি করে যদি না বাঁচি, তাহলে আগামী বছর আর এই কাজটা করতে পারব না। তাই শুধু দাম নয়, ভালো ক্রেতাও চাই।”
এখানে ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং হাজারো খামারির জীবিকার আশ্রয়। ধামরাইয়ের খামারগুলো যেন হয়ে উঠেছে সেই আশার আলো, যেখানে শুধু পশু নয়—লালন করা হচ্ছে ঘাম, সময় আর ভালোবাসা।
একুশে সংবাদ / ঢা.প্র/এ.জে