সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চলে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও এখনও পুরোদমে তা শুরু হয়নি। বেশিরভাগ জমিতে ধান আধাপাকা থাকায় কৃষকরা শঙ্কায় আছেন। এরই মধ্যে ১৮ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত ও নিম্নাঞ্চল প্লাবনের পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র।
ফলে হাওর অঞ্চলের কৃষকরা ফসল রক্ষায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করেছে।
জেলার ১২টি উপজেলার ১৩৭টি হাওরে চলতি মৌসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে। এ বছর ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
১৫ এপ্রিল থেকে ধান কর্তন শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। মাঠে কাজ করছে ৩৬০টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন, ১ লাখ ৩ হাজার ৮৭৮ জন স্থানীয় শ্রমিক এবং বাহিরের জেলা থেকে আগত ২ হাজার ৯৫ জন শ্রমিক।
কৃষকরা জানান, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে, তবে ধানের অধিকাংশ এখনো আধাপাকা। ভারী বৃষ্টির আশঙ্কায় তারা দ্রুত ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের মতে, এখনও প্রায় ১৫% ধান কাটা হয়নি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, “এ বছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। কোনো পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। প্রকৃতি অনুকূলে থাকলে কৃষকরা নির্ভাবনায় ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।”
জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসফিকীন নুর বলেন, “এখন পর্যন্ত উপজেলায় মাত্র ৭% ধান কাটা হয়েছে। সম্ভাব্য বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
শান্তিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও সুকান্ত সাহা বলেন, “গত ১১ এপ্রিল মাননীয় স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা হাওরে ধান কেটে মৌসুমের উদ্বোধন করেছেন। এই উপজেলায় ৮৭টি কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রা ৯৪ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের, যার মূল্য প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা।”
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া বলেন, “আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি প্রতিকূল হতে পারে। তাই কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কেটে গোলায় তোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
হাওর অঞ্চলের মানুষদের প্রধান জীবিকা এই বোরো ফসল। তাই সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন চায়, কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন কৃষকদের কষ্টের ফল কেড়ে নিতে না পারে।
একুশে সংবাদ//সু.প্র//এ.জে