টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাভাবিপ্রবি) দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (মাকসু) গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫০তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহা: তোহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
৮ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (বিজিই) বিভাগের অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. মহিউদ্দিনকে। রিজেন্ট বোর্ডের সদস্য, বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে এই কমিটি গঠিত হয়েছে। শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ দান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিমকে সদস্য-সচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নোটিশে কমিটির কার্যপরিধিতে ৩ টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
১. মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনা করণ।
২. কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ গঠনের বিষয়ে মতামত প্রদানের সুপারিশ প্রেরণ।
৩. কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র প্রণয়ন।
এর আগে ছাত্র সংসদ গঠনের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিলেন। তবে কমিটি ঘোষণার পর আপাতত অনশন কর্মসূচি স্থগিত রয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু কমিটি গঠনে তারা সন্তুষ্ট নন, বরং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা প্রয়োজন।
ছাত্র সংসদের দাবিতে গত আগস্টে আমরণ অনশনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আক্তারুজ্জামান সাজু বলেন,“আমরা দির্ঘদিন যাবৎ ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করে আসছি। একপর্যায়ে আমরা ছাত্র সংসদের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করি । বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করলেও কমিটির কার্যপরিধিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরীর কোন নির্দেশনা নেই। আমরা আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় দিয়েছি। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হলে আমরা আবারও কঠোর আন্দোলনে যাব।”
অপর এক শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন,মাকসু প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আমরা দুই মাস যাবৎ আন্দোলন করে আসতেছি। সেই আন্দোলনের ফসল আমরা এই কমিটির মাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি না। কারণ এই কমিটিতে যে সমস্ত শিক্ষক মহোদয়গণ আছেন তারা এটা নিয়ে কতটুকু সময় দিতে পারবেন তা নিয়ে এখনো শিক্ষার্থীদের মনে সংশয় রয়েছে। এই কমিটির কার্যকাল অর্থাৎ কতদিনের মধ্যে কার্যক্রম শেষ করতে হবে সেটার কোন স্পষ্ট ধারণা নেই। যা শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসন ধোঁকাবাজির ন্যায় আচরণ করেছে যা আমরা শিক্ষার্থীরা কখনোই আশা করি নাই। এরকম একটি ছলনাময় কমিটি দিয়ে শিক্ষার্থীদের বোকা বানানোর জন্য মাভাবিপ্রবি প্রশাসনকে ধিক্কার জানাই।
আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী তুষার আহমেদ বলেন,“ছাত্র সংসদ ছাড়া শিক্ষার্থীদের কোনো গণতান্ত্রিক প্ল্যাটফর্ম নেই। প্রশাসনের এই উদ্যোগ ইতিবাচক হলেও কবে নির্বাচন হবে তা পরিষ্কার নয়। আমরা চাই, দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা করে নির্বাচন দেওয়া হোক।”
এই বিষয় জানতে চাইলে,শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শ দান কেন্দ্রের পরিচালক ও কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল করিম বলেন,ছাত্র সংসদের জন্য ইতিমধ্যে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন হয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ে মধ্যে আমাদের কার্যপরিধির বিষয়ে কাজ করব। শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসেছিল নির্বাচনের রোড ম্যাপ জানার জন্য, আমি তাদের জানিয়েছি কমিটির সভায় নির্বাচনের রোডম্যাপ বিষয় আমি কথা বলব।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই কমিটি ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলেও সুনির্দিষ্ট নির্বাচন তারিখ ঘোষণা ছাড়া তাদের আন্দোলনের লক্ষ্য পূর্ণ হবে না।
একুশে সংবাদ/এ.জে