ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ইকসু) গঠনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিভিন্ন বিভাগের আটজন শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় এটি অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলন শেষে ইকসু গঠন ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষনার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচির ঘোষণা দেন তারা। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বসার জায়গার অব্যবস্থাপনা হওয়ায় ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রতিবাদস্বরূপ পেছনের সারিতে গিয়ে বসেন। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতার উপস্থিতির অভিযোগ এবং বিভিন্ন ইস্যু ধামাচাপা দিতে এসময় ইকসুর দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়। এসব নিয়ে সেখানে কয়েক দফায় হট্টগোলের সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থল থেকে বেরিয়ে যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী বোরহান উদ্দিন। এছাড়া অন্য আয়োজকরা হলেন আল-ফিকহ অ্যান্ড ল’ বিভাগের হাসিব আল সজিব ও সায়েম আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের রাকিবুল ইসলাম, আইসিটি বিভাগের জোবায়ের হোসেন, আল-হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের আহমাদ আল আলামিন এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের জুলকারনাইন দোলন। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ইবি শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমাদ গালিব, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, খেলাফতে ছাত্র মজলিস ইবি শাখার সভাপতি সাদেক আহম্মদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ‘ইকসু’ গঠনের দাবিতে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিলেও প্রশাসন আইনের দোহাই দিয়ে ইকসু গঠন থামিয়ে দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে না থাকা সত্ত্বেও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বেরোবি ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের অধিকার এবং কোনমতেই এই অধিকার থেকে কোন অজুহাতে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আমাদের এই ইকসু গঠন আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের আহ্বান জানাই।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে বসার জায়গার অব্যবস্থাপনা হওয়ায় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা পেছনের সারিতে গিয়ে বসেন। পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার উপস্থিতির অভিযোগ তোলেন এক শিক্ষার্থী। তাছাড়াও বিভিন্ন ইস্যু ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এই সময় ইকসুর দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সাবেক সহসমন্বয়ক মোবাশ্বির আমিন। এসব নিয়ে কয়েক দফায় সেখানে হট্টগোলের সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থল থেকে বেরিয়ে যান।
ইবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, সাধারন শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্মের কথা বলা হলেও সেখানে সাত আটজন ছাড়া কোন সাধারণ শিক্ষার্থী এবং আমাদের বোনদেরও অংশগ্রহন ছিলোনা। এটি কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে বিরোধীতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শোকজের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার একটি এজেন্ডা বলে আমি ধারণা করছি।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, আয়োজকরা একবার বলছে ছাত্র সংগঠনের নেতাদের আহ্বান করেছে আরেকবার বলছে আহ্বান করেনি। আমরা সকল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং শিক্ষার্থীরা একই প্লাটফর্মে থেকে আন্দোলন করার স্বপ্ন নিয়ে আসলেও এখানে দেখতে পাচ্ছি দ্বিচারিতা করা হচ্ছে।
সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘আমার সন্দেহ হয়, ইবির পরিবেশ যেভাবে স্বাভাবিক চলছে সেটিকে বিভাজন করার চেষ্টা করা হচ্ছে কি-না। ইকসু বাস্তবায়নে সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করা হবে, যেখানে আমাদের সহযোদ্ধা বোনেরাও থাকবে।’
একুশে সংবাদ/এ.জে