চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় চোর সন্দেহে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোক ও ক্ষোভ। শুক্রবার ভোরে কাঞ্চননগর ইউনিয়নের চেইঙ্গার ব্রিজ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত কিশোরের নাম রিহান উদ্দিন মাহিন (১৫)। তিনি কাঞ্চননগরের সাগর আলী তালুকদার বাড়ির মুদি দোকানি মুহাম্মদ লোকমানের ছেলে এবং স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তার দুই বন্ধু মানিক ও রাহাত, বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরে মাহিনসহ কয়েকজন কিশোর সাগর তালুকদার বাড়ির কাছে অবস্থান করছিল। এ সময় প্রতিপক্ষ একটি গ্রুপ তাদের ধাওয়া করে। প্রাণ ভয়ে মাহিনসহ তিনজন একটি নির্মাণাধীন ঘরের ছাদে আশ্রয় নেন। কিন্তু ধাওয়াকারীরা তাদের টেনে-হিঁচড়ে চেইঙ্গার ব্রিজে নিয়ে যায়। সেখানে তিন কিশোরকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাহিন। আহত মানিক ও রাহাতকে গুরুতর অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা আগের দিন নগর থেকে বেড়াতে ফিরছিল। রাত তিনটার দিকে বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সাত-আটজন যুবক তাদের চোর আখ্যা দিয়ে ধাওয়া করে। পরে সেতুর ওপর বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। নিহতের পরিবার ও আহতদের স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, কোনো প্রমাণ ছাড়াই চোর সন্দেহে তাদের ওপর মব গঠন করে হামলা চালানো হয়েছে।
এ ঘটনায় ফটিকছড়ি থানা পুলিশ নোমান ও আজাদ নামে দুই যুবককে আটক করেছে। ওসি নুর আহমদ বলেন, “চোর সন্দেহে কাউকে পিটিয়ে হত্যার কোনো আইনগত সুযোগ নেই। অপরাধ প্রমাণের বিষয়টি আদালতের। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। কেন এ ঘটনা ঘটেছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার পর এলাকায় শোকের পাশাপাশি উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়ে। নিহতের পরিবারসহ স্থানীয়রা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)। তারা নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন। পাশাপাশি জনসাধারণকে আইন হাতে তুলে না নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানান।
এই মর্মান্তিক গণপিটুনির ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে—চোর সন্দেহে মব গঠন করে নিরীহ মানুষকে পিটিয়ে হত্যার মতো আইনবহির্ভূত প্রবণতা কোথায় গিয়ে থামবে?
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে