২০২৫ সালের জুলাই মাস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানোর কথা ছিল সম্পূরক বৃত্তির টাকা। কিন্তু বরাদ্দ অর্থ ছাড়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এখনো সেই টাকা শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছেনি। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চরম হতাশা ও ক্ষোভে ফুঁসছে।
এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম, পিএইচডি বলেন, “প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট অনুমোদন হয় এবং ধাপে ধাপে তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে সম্পূরক বৃত্তির নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। তবে বর্তমানে বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকায় এখনো শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা যায়নি। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে এই বৃত্তি কার্যকর করবে।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, “আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে যে দাবি আদায় করেছিলাম, সেটি বাস্তবায়নে বিলম্ব হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশি ভোগান্তি পোহায়, কারণ এখানে এখনো কোনো আবাসিক হল নেই। প্রতিদিন আমাদের ভাড়া বাসার জন্য বাড়তি খরচ, পানি-বিদ্যুৎ বিল, যাতায়াত সব মিলিয়ে চাপ সামলাতে হয়। এ অবস্থায় সম্পূরক বৃত্তি শুধু অর্থ সহায়তা নয়, এটা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও টিকে থাকার অন্যতম ভরসা। কিন্তু টাকা ছাড় না হওয়ায় চরম হতাশা তৈরি হয়েছে। প্রশাসন কেবল আশ্বাস দিচ্ছে, বাস্তবায়নে দেরি করছে এর দায়ভার প্রশাসনকেই নিতে হবে।”
ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাকিব বলেন, “সম্পূরক বৃত্তি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঠিক পদক্ষেপ ও তথ্য ঘাটতি রয়েছে। প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে বাজেট পেশ হয় এবং ইউজিসি নির্ধারিত সময়ে অর্থও দেয় তা সত্ত্বেও প্রশাসন নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। আমরা দুই দফা অবস্থান কর্মসূচি করেছি। দ্রুত সঠিক তথ্য না দিলে আমরা কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।”
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “গত সপ্তাহে আমরা মাননীয় উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন ইউজিসি থেকে অর্থ ছাড় পেলেই জুলাই মাস থেকে হিসাব করে শিক্ষার্থীদের সম্পূরক বৃত্তি দেওয়া হবে, এবং নীতিমালাও প্রস্তুত। আমরা এটি ইতিবাচকভাবে নিয়েছি, কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই আশ্বাসকে দ্রুত বাস্তব রূপ দিতে হবে। বাস্তবে এখানে দুই পক্ষেরই দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যাচ্ছে। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির প্রক্রিয়ায় সিস্টেমের কিছু প্রতিবন্ধকতা আছে; আবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎপরতাতেও ঘাটতি দেখা যায়। আমরা অন্তত তিন দফা উপাচার্যের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছি এবং ক্যাম্পাসের সব কর্মসূচিতে একসঙ্গে দাবি জানিয়েছি অতি দ্রুত অর্থ ছাড় দিয়ে বৃত্তি নিশ্চিত করতে হবে। বিলম্ব চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের প্রশাসন ও সরকারের ওপর আস্থা ক্ষয়ে যাবে; তখন প্রশাসনকে ছাত্রদের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে।”
শিক্ষার্থীরা জানান, “এখনও প্রশাসনের অগ্রগতি না দেখায় তারা হতাশ। অর্থ ছাড়ের অনিশ্চয়তা এবং প্রশাসনিক টালবাহানা সহ্য করা হবে না। যদি দেরি চলতে থাকে, আমরা আবারও কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দিয়ে আমাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করব।”
একুশে সংবাদ/এ.জে