জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) পুরান ঢাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা বর্তমানে স্থান সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যার সম্মুখীন। এই সমস্যার সমাধানে ২০১৬ সালে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়ায় ২০০ একর জমিতে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। তবে, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রকল্পটি বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হচ্ছে।
২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয় এবং জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়। বর্তমানে ১৮৮.৬০ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, তবে অবশিষ্ট ১১.৪০ একর জমি এখনও অধিগ্রহণের অপেক্ষায়। প্রকল্পের প্রথম ধাপে ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, লেক ও পুকুর খনন, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন নির্মাণ এবং অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা স্থাপনের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে, এই কাজগুলোর অনেকাংশ এখনও অসমাপ্ত।
একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও প্রকল্পের বিলম্বের পেছনে প্রধানত প্রশাসনিক জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক বাধা দায়ী। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (DPP) বিভিন্ন ত্রুটি থাকার কারণে, একটি সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (RDPP) পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়, যা এখনও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (ECNEC) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতায় শিক্ষার্থীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তারা ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার দাবিতে ৩৫ ঘণ্টার অনশন কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়। তবে, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবের অনুমোদন না হওয়ায় এবং তহবিল বরাদ্দ না হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
এবিষয়ে জবির ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী রিয়াতুল ইসলাম রাব্বি বলেন, `জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষের অভাব, গবেষণা ও ল্যাব সুবিধার ঘাটতি, আবাসনের সমস্যা এবং অবকাঠামোগত সংকট শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। পুরান ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এত শিক্ষার্থী নিয়ে কার্যকর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক ও একাডেমিক উন্নয়নের জন্য প্রশস্ত ক্যাম্পাস, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও মুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস দ্রুত চালু হলে এই সংকট অনেকটাই নিরসন হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছি।`
উল্লেখ্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ধরে বিলম্বিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের জন্য হতাশাজনক। প্রশাসনিক জটিলতা ও আমলাতান্ত্রিক বাধা দ্রুত সমাধান করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।
একুশে সংবাদ/জবি.প্র/এ.জে
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
