বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বহুদিনের ‘চোকার্স’ তকমা ঘোচাতে প্রোটিয়ারা যে কতটা মরিয়া ছিল, সেটাই যেন প্রমাণ করল লন্ডনে তাদের জয়।
প্রথম ইনিংসে ব্যাট-বলের দোলাচলে থাকা ম্যাচের ভাগ্য শেষে গড়ায় দক্ষতা আর ধৈর্যের লড়াইয়ে। টস জিতে বোলিং নেওয়ার সিদ্ধান্তই প্রোটিয়াদের অনেকটা এগিয়ে দেয়, কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে পিচ হয়ে ওঠে ব্যাটিং সহায়ক—যার পুরো ফায়দা তোলেন এইডেন মার্করাম ও অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা।
অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা—স্টার্ক, কামিন্স, হ্যাজেলউড—পরে বল হাতে বিশেষ কিছু করতে পারেননি। উইকেট থেকে তেমন সাহায্য না পেয়ে হতাশ হতে হয় স্পিনার নাথান লায়নকেও। ফলে ২৮২ রানের লক্ষ্য ডিফেন্ড করতে ব্যর্থ হয় অজিরা। দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয়।
জয়ের নায়ক এইডেন মার্করাম। ২০৭ বলে ১৩৬ রানের এক ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন তিনি। পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং, মনোযোগ ধরে রাখা, এবং প্রতিপক্ষের সেরা বোলারদের সামলে রেখে ধৈর্যের প্রমাণ—সবই ছিল তার ব্যাটিংয়ে। মাত্র ৬ রান দূরে থাকতেই আউট হলেও ম্যাচ তখন কার্যত দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে।
অধিনায়ক বাভুমাও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৪ বল মোকাবিলা করে ৬৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। ইনজুরির কারণে হাঁটতে কষ্ট হলেও পাঁচ ঘণ্টা ক্রিজে থেকে দলের প্রয়োজনে লড়েছেন। প্রথম ইনিংসেও ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
ডেভিড বেডিংহ্যাম দুই ইনিংসেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন—প্রথম ইনিংসে ৪৫ ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত রান যোগ করে। বল হাতে উজ্জ্বল ছিলেন কাগিসো রাবাদা। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে অজিদের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন তিনি। জেনসেন নেন ৪ উইকেট এবং লুঙ্গি এনগিডি দ্বিতীয় ইনিংসে শিকার করেন ৩ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ে নেমেই চাপে পড়ে। রাবাদা-জেনসেনের আগুনে বোলিংয়ে মাত্র ৬৭ রানেই ৪ উইকেট হারায় তারা। উসমান খাজা, ক্যামেরন গ্রিন, লাবুশেন এবং হেড—all ফিরেছেন দ্রুতই। স্মিথ ও ওয়েবস্টার কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও শেষ দশ উইকেটে ২০ রানের ব্যবধানে দল অলআউট হয় ২১২ রানে।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরু ছিল আরও বাজে। প্রথম ৩০ রানেই ৪ উইকেট হারায় দলটি। স্টার্কের এক বলেই সাজঘরে ফেরেন মার্করাম, এরপর দ্রুত ফিরে যান রিকেলটন, মুল্ডার ও স্টাবস।
সেখান থেকে বাভুমা ও বেডিংহ্যাম কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও কামিন্সের জোড়া আঘাতে দল ১৩৮ রানে গুটিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে অজিদের ২১২ রানের জবাবে ৭৪ রানের লিড পায় তারা। ওই ইনিংসে কামিন্স একাই শিকার করেন ৬ উইকেট।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং-বান্ধব উইকেট ও ধৈর্যের পরীক্ষা জয় করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে তারা ঘুচিয়েছে বহু বছরের চাপা ক্ষোভ আর আক্ষেপ।
একুশে সংবাদ/স.ট/এ.জে