AB Bank
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

তিস্তা: আশার ছলনে ভুলি


Ekushey Sangbad
মোশতাক আহমেদ
১২:২৩ পিএম, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
তিস্তা: আশার ছলনে ভুলি

 

তিস্তা ইস্যুতে আবারও আশ্বাস আর আশা নিয়েই ভারত থেকে ফিরতে হলো বাংলাদেশকে। খুব প্রত্যাশিত না হলেও অনেকে ভেবেছিলেন, যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র এক বছরের মতো বাকি, এবার হয়তো কিছু একটা ঘটবে। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রধানমন্ত্রীর চার দিনের সরকারি সফরের দ্বিতীয় দিনেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যখন দিল্লির বাংলাদেশ হাউসে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন, সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। চায়ের টেবিল থেকে সামাজিক মাধ্যম- সব জায়গায়ই তিস্তা প্রসঙ্গ।

 

হলো না, হলো না- এবারও হলো না! কিন্তু কেউই প্রশ্ন তুলছেন না, আদৌ কি কিছু হওয়ার কথা ছিল? রাষ্ট্রীয় কূটনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালমাত্রই জানেন, কোনো দেশের সরকারপ্রধান যখন অন্য দেশে সফরে যান তখন কী কী চুক্তি, সমঝোতা স্মারক, প্রটোকল ইত্যাদি সই করা হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে। এমন নয় যে একজন সরকারপ্রধান গেলেন, আলোচনা করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে একটা চুক্তি সই হয়ে গেল। উল্লেখ্য, দুই দেশের মধ্যে যে কোনো বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় কোনো চুক্তি চূড়ান্তকরণের আগে অনেক ধাপ পেরিয়ে চূড়ান্ত দলিলে স্বাক্ষর করা হয়। এই কাজটা করেন দুই দেশের আমলা বা পেশাদার কূটনীতিকরা। প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দুই দেশের মধ্যে চুক্তির খসড়া বিনিময় করা হয় এবং সব শেষে আসে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের প্রশ্ন। যাঁরা চুক্তি হলো না, হলো না বলে কপাল চাপড়াচ্ছেন, তাঁরা কি এ বিষয়গুলো ভেবে দেখেছেন? তবে হ্যাঁ, রাজনৈতিক মতৈক্যের ক্ষেত্রটা অন্তত তৈরি করা যেত। কিন্তু সেটাই হলো না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সুকৌশলে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। এমনকি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ‍‍`তিস্তা‍‍` শব্দটিও উচ্চারণ করলেন না।

 

এই যে কোনো প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া; এ-ও এক ধরনের কূটনৈতিক চাল, যা ভারতীয় কূটনীতিকরা প্রয়োগ করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। মনে পড়ে, ২০২১ সালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ঢাকা সফরে এসে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা যখন তাঁকে তিস্তা প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন, তিনি এর উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ভারতের অবস্থান আগের মতোই। কিন্তু এই আগের মতোটা কেমন, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। এভাবেই ভারতের এড়িয়ে যাওয়ার কূটনীতির কাছে বারবার মার খাচ্ছে তিস্তা ইস্যু।

 

এমনটি চলে আসছে সেই ১৯৮৩ সাল থেকে। দরকষাকষি আর আশ্বাসেই আটকে থাকছে সব। এ প্রসঙ্গে ইতিহাসের একটু উজানে ফিরে যাওয়া যেতে পারে। তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের দ্বিতীয় সভায়। এর সূত্র ধরে ১১ বছর পর ১৯৮৩ সালে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি। ১৯৮৫ সালে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ১৯৮৭ সালে চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়। তারপর আর কোনো বৃদ্ধি বা চুক্তি করা হয়নি। এভাবেই অকালে শুকিয়ে যায় ১৯৮৩ সালে স্বাক্ষরিত অন্তর্বর্তীকালীন তিস্তা চুক্তি। তার পর থেকেই চলছে আশ্বাস আর আশার খেলা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন ঢাকা সফরে আসেন, তখনও আশা করা হয়েছিল- কিছু একটা হবে। শোনা যায়, ১৫ বছর মেয়াদি আরও একটা চুক্তির খসড়াও নাকি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা ভেস্তে যায়।

 

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ঘিরে আবারও আশা তৈরি হয় তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের। সফরে তিনি বৈঠকেও বসেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু সেবারও বেঁকে বসেন মমতা। আটকে যায় তিস্তা চুক্তি। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ঢাকা সফরে এলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা ছাড়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, তিস্তা প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলবেন না। অবশ্য ঢাকায় এসে বললেন, ‍‍`আমার ওপর আস্থা রাখুন।‍‍` ব্যস! এ পর্যন্তই। তারপর কেটে গেছে প্রায় সাত বছর। কিন্তু সুরাহা হলো না প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তিটি। যদিও ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের সরকারপ্রধানের মধ্যে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সম্মেলনে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বর্তমান সফরে তিনি বিষয়টিকে ছুঁয়েই দেখলেন না। ফলে আবারও ঝুলে গেল কাঙ্ক্ষিত তিস্তা চুক্তি।

 

কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে? অধিকাংশ মানুষই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণেই নাকি তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। কথাটা হয়তো আংশিক সত্য, সবটুকু নয়। আসলে ভারতের কূটনীতির কাছে বারবারই হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই যে অনেকেই বলছেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় মমতা দিল্লিতে যাননি। যতটুকু জানা যায়, তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি। আমন্ত্রণ ছাড়া একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনো বিদেশি সরকারপ্রধানের সঙ্গে দেখা করেন কীভাবে? তাহলে কি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মমতাকে কার্ড হিসেবে ব্যবহার করছে তিস্তা ইস্যুতে নিজেদের ইচ্ছাহীনতাকে ঢেকে দেওয়ার জন্য? আর মমতা প্রসঙ্গেও এ কথা স্মরণে রাখা দরকার- তিনি একজন পপুলিস্ট নেতা; জ্যোতি বসুর মতো কোনো আদর্শিক নেতা নন। একজন পপুলিস্ট নেতা হিসেবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা যা করা দরকার তা-ই তিনি করবেন- এটাই স্বাভাবিক। প্রতিবেশীর সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় তাঁর নেই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের দক্ষতার পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না- কূটনীতি হলো দেওয়া-নেওয়ার ব্যাপার। শুধু দিয়ে গেলে তা কূটনীতি হয় না। আর ভারতের মাছের বদলে শাক নীতির ব্যাপারেও হতে হবে আরও সচেতন, যেমনটি তারা করেছে তিস্তা এড়িয়ে কুশিয়ারায় জল সন্তরণে। মনে রাখতে হবে, কূটনীতিতে উইন-উইন অবস্থা সৃষ্টি করতে না পারলে এমনটি চলতেই থাকবে। আশা আর আশ্বাসের বালুচরেই আটকে থাকবে প্রাপ্তির সম্ভাবনা।

 

মোশতাক আহমেদ :কলাম লেখক; জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা

 

 একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

Link copied!