AB Bank
ঢাকা শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যে কারণে থামা দরকার


Ekushey Sangbad
ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার
০২:২৭ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যে কারণে থামা দরকার

সাম্প্রতিক ইরান-ইসরায়েল সরাসরি সংঘাতকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে, তা অমূলক নয়। ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসার পর নতুন ইরানি সরকার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনকে সরাসরি সমর্থন করে এবং ইরানে অবস্থিত ইসরায়েল দূতাবাসকে ফিলিস্তিনি দূতাবাসে পরিণত করে। পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দুটি পৃথক রাষ্ট্রের প্রস্তাবকে সমর্থন করলেও খোমেনি তা মেনে নেননি, বরং ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করেন। অন্যদিকে ইরান যেন সামরিক দিক দিয়ে কোনোভাবেই শক্তিশালী হতে না পারে, সে জন্য ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে ইরানের অনেক বিজ্ঞানীকে গোপনে হত্যা করে বলে অভিযোগ। ২০২০ সালের নভেম্বরে ইরানের সবচেয়ে চৌকস পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহকে তেহরানের জনবহুল রাস্তায় রিমোট কন্ট্রোল মেশিনগান দিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। দুটি রাষ্ট্রই ভূরাজনীতির ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে তৎপর হয়ে ওঠে।

বর্তমানে রাষ্ট্র দুটো মুখোমুখি হলেও একসময়ে তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দানকারী দ্বিতীয় মুসলিম রাষ্ট্র হলো ইরান। উল্লেখ্য, প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তুরস্ক। সে সময় ইরানের ক্ষমতায় ছিলেন রেজা শাহ পাহলভী। তখন ইরানের সঙ্গে ইসরায়েলের সামরিক, অর্থনৈতিক সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৫৭ সালের ২০ মার্চ তৈমুর বখতিয়ারের নেতৃত্বে ইরানের গোয়েন্দা সংস্থা সাভাক প্রতিষ্ঠিত হলে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ তাকে সাহায্য করে। তবে এই সম্পর্কের পেছনে ইরানের উদ্দেশ্য ছিল ইসরায়েলের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আমেরিকার সুনজরে থেকে ইরানে রাজতন্ত্রকে নিরাপদ রাখা। আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে সংঘটিত ইসলামী বিপ্লবে রেজা শাহ পাহলভী ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মধ্য দিয়ে ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের ইতি ঘটে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে দুই দেশের মধ্যে খোলাখুলি শত্রুতা শুরু হয়। সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং উপসাগরীয় যুদ্ধে ইরাকের পরাজয়ের পর মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা জোরদার হয়। ১৯৯২ সালে বুয়েনস আইরেসে ইসরায়েলি দূতাবাসে হামলা এবং ১৯৯৪ সালের আর্জেন্টিনা-ইসরায়েল মিউচুয়াল অ্যাসোসিয়েশনে (আমিআ) বোমা হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করে ইসরায়েল। অন্যদিকে ইরানের অভ্যন্তরে একাধিক হত্যাকাণ্ড ও বোমা হামলা এবং ইরানের পিপলস মুজাহেদিন ও জুন্দাল্লাহর মতো সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে সমর্থনের অভিযোগ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ তাদের মিত্র রাষ্ট্রগুলো সরাসরি ইসরায়েলকে নানাবিধ সামরিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ফলে অর্থনীতি ও অস্ত্রশিল্পে ইসরায়েল দ্রুত অগ্রগতি লাভ করে এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পশ্চিমাদের সহায়তায় ইসরায়েল পরমাণু বোমার অধিকারী হয় বলেও জানা যায়, যদিও ইসরায়েল কখনও তা স্বীকার করেনি। নিজেদের নিরাপত্তায় ইরানও দ্রুত তার সামরিক শিল্পকে শক্তিশালী করতে মনোযোগী হলে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে ঠেকাতে তৎপর হয়ে ওঠে। ইরানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি ও পরমাণু প্রকল্পকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে ইসরায়েল। শুধু তাই নয়, ইরানকে মোকাবিলা করতে যুক্তরাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরের বিভিন্ন দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলে এবং ভূমধ্যসাগরের শাসকদের মধ্যে ইরানবিরোধী একটি মনোভাব তৈরি করে।

এ অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ইরান তার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বাড়াতে সচেষ্ট হয়। ইরানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ১৯৮৫ সালে লেবাননে গড়ে ওঠে সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন হিজবুল্লাহ। এটি হচ্ছে লেবাননভিত্তিক শিয়া ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল ও সশস্ত্র সংগঠন। ১৯৯০-এর দশকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে সহযোগিতা করতে শুরু করে ইরান। ইয়েমেনে উদ্ভূত হয় হুতি আন্দোলন, যার আনুষ্ঠানিক নাম আনসারুল্লাহ। এটি একটি শিয়া ইসলামপন্থি রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন। হুতিরা যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও ইহুদিদের বিরুদ্ধে তাদের সাংগঠনিক স্লোগান গ্রহণ করে।

ইরান ইসরায়েলের চেয়ে আয়তনে বহুগুণ বড় একটি দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে পর্বতময় দেশগুলোর একটি ইরান। ইরানের জনসংখ্যাও ইসরায়েলের প্রায় ১০ গুণ। নিয়মিত সৈন্যসংখ্যাও ইসরায়েলের প্রায় চার গুণ। তা ছাড়া বাণিজ্যিক পথ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালির ওপরেও রয়েছে ইরানের নিয়ন্ত্রণ। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমাদের সমর্থনে ইসরায়েল সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক শক্তিশালী। ইরানকে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল করতে এবং ইরান যেন কোনোভাবেই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হতে না পারে সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা শক্তি ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়ে রেখেছে।

১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের দুই শীর্ষ কমান্ডারসহ মোট সাতজনকে হত্যা করার প্রতিশোধ হিসেবে ১৩ এপ্রিল ইরান কর্তৃক ইসরায়েলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এ হামলাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমা শক্তি নতুন করে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ দিতে একমত হয়েছে। এদিকে রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া, চীন ইরানের পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। ইসরায়েল ইরানে পাল্টা আক্রমণ করেছে ১৯ এপ্রিল। এভাবে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব নতুনভাবে এখন মহাসংকটে নিপতিত হবে, যা কারও কাম্য নয়।

একুশে সংবাদ/স.ল.প্র/জাহা

 

Link copied!