AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আতঙ্ক কাম্য নয়


Ekushey Sangbad
এম এ খালেক
০৬:৫৭ পিএম, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে আতঙ্ক কাম্য নয়

বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ এপ্রিল জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালা জারি করেছে। এই নীতিমালার আওতায় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাংকিং সেক্টরে একীভূতকরণ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হচ্ছে। এই আলোচনার একটি ইস্যু ছিল, কোন নীতিমালার আওতায় দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। আপাতত নীতিহীনতার সংকট কিছুটা হলেও সমাধান হলো। কিন্তু প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঘোষিত ব্যাংক একীভূতকরণ-সংক্রান্ত নীতিমালা কতটা বাস্তব এবং সময়ের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম? প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসিকে দেশের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের সঙ্গে একীভূত করা হবে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক একীভূত করা হবে। এর আগে পদ্মা ব্যাংককে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এই ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া কতটা কার্যকর ও সফল হবে।

যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, অর্থনীতির পরিভাষায় তা কি একীভূতকরণ, নাকি অধিগ্রহণ? একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণের আলাদা সংজ্ঞা আছে। সার্কুলারে তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়নি। দুটি ব্যাংক একীভূতকরণ করা হলে নতুন প্রতিষ্ঠানটির কী নামকরণ করা হবে, তা সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে দেওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হতে পারে। একীভূত করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান নতুন নামে যাত্রা শুরু করতে পারে। অথবা দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম মিলিয়ে নতুন নামকরণ করা যেতে পারে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একীভূত করার পর প্রতিষ্ঠানটির নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। অধিগ্রহণ করা হলে সাধারণত যে প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী, তার নামেই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক একীভূতকরণের লক্ষ্যে যে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেখানে পদ্মা ব্যাংকের নাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। একটি প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তার অস্তিত্ব হারালে চারিত্রিকভাবে একে অধিগ্রহণ হিসেবেই গণ্য করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে বলা হয়েছে, একীভূত হওয়ার পর দুর্বল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকগণ পাঁচ বছর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তার অর্থ হচ্ছে, দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের শুধু পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখা হবে। পরে তারা চেষ্টা করলে আবারও পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক হতে পারবেন। অনেকেই মনে করছেন, এটা একধরনের ‘দায়মুক্তি’ দেওয়ার শামিল। কারণ একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালকগণ যদি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন, তাহলে সেই ব্যাংকে দুর্নীতি-অনিময় সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। দুর্বল ব্যাংকে যারা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তাদের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসাটাই ছিল বাঞ্ছনীয়।

ব্যাংক একীভূত হওয়ার পর তিন বছর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এটা মোটেও ঠিক হবে না। যারা সত্ এবং ব্যাংকের প্রতি একনিষ্ঠ, তাদের চাকরিতে অব্যাহত রেখে যাদের বিরুদ্ধে চাকরিজীবনের কোনো পর্যায়ে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল, তাদের ছাঁটাই করা প্রয়োজন। কারণ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বহাল রেখে কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো চলতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করতে পারে। দুর্বল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের তিন বছর চাকরিচ্যুত না করার নিশ্চয়তা দেওয়া হলেও সবল ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ কিন্তু এমন কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না।

একীভূতকরণ একটি জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। কাজেই এর জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনে বিদেশি এক্সপার্টদের সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক একীভূত করা হবে। এর পেছনে সঠিক যুক্তি আছে। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের কার্যক্রম একই রকমের। তারা মূলত কৃষি খাতে অর্থায়ন করে। একসময় বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা একীভূতকরণের ক্ষেত্রে একই প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। এ দুটি প্রতিষ্ঠান শিল্প খাতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। কিন্তু এখন সোনালী ব্যাংক পিএলসির সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি কেন একীভূত করা হবে? সোনালী ব্যাংক পিএলসি ট্রেজারি ব্যাংক হলেও তারা মূলত বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক যে ঋণ প্রদান করে, তার সিংহভাগই দীর্ঘমেয়াদি শিল্প ঋণ। আর সোনালী ব্যাংক তার ঋণের বেশির ভাগই স্বল্পমেয়াদি বাণিজ্যিক ঋণ প্রদান করে থাকে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে খেলাপি ঋণের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের প্রবণতা বেশি থাকে। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংক-সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো একীভূত করে কোনো ভালো ফল পাওয়া যাবে না। বরং বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে অবশিষ্ট রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর শেয়ার ছেড়ে বিরাষ্ট্রীয়করণ করা যেতে পারে। এতে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নির্দেশনায় বলেছে, দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংক ইচ্ছে করে একীভূত করলে কী নিয়মে তা করা হবে আর স্বেচ্ছায় একীভূত করা না হলে জোর করে একীভূত করা হবে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করছেন, কোনো দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার আগেই তার সম্পদ ও দায়দেনার পূর্ণাঙ্গ হিসাব প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় আর একটি ব্যাংক কেন বা কীসের ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রহণ করবে?

বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক ও বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাকে একীভূত করা হয় ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। এ দুটি একীভূত ব্যাংক বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড নামে ব্যাবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি। সে সময় নতুন ব্যাংক সম্পর্কে নানা ধরনের আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু গত ১৫ বছরে এই ব্যাংক মোটেও কোনো সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিতে পারেনি। ব্যাংকটির অবস্থা বরং দিনে দিনেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতা। বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় যারা বিডিবিএলের পরিচালনা পর্ষদে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এমন কিছু পরিচালকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, ব্যাংকিং অর্থনীতি সম্পর্কে যাদের কোনো ন্যূনতম ধারাণা ছিল না। ফলে এদের হাতে ব্যাংকটি নিরাপদ ছিল না।

এক বা একাধিক ব্যাংক একীভূত করা হলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। ব্যাংকিং সেক্টরকে ভালোভাবে পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব আইনি সংস্কার করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই ঋণখেলাপি এবং দুষ্ট গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় নিবেদিত। ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পক্ষে আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে কিছু করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ঋণখেলাপিদের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যেসব আইনি সংস্কার বা পরিবর্তন করা হয়েছে, তা বাতিল করে আইনগুলো পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রয়োজনে আরো কঠোর আইন প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে ২০১৫ সালের রাজনৈতিক সহিংসতার অজুহাতে ৫০০ কোটি টাকা ও তদূর্ধ্ব পরিমাণ ঋণাঙ্ক পুনর্গঠনের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তা-ও বাতিল করা যেতে পারে। আইনের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্বলের স্বার্থকে সুরক্ষা দেওয়া এবং আইনবিরোধী সবল প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করা। কিন্তু আমাদের দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য যেসব আইন রয়েছে, তার বেশির ভাগই ঋণখেলাপিদের পক্ষে। ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে তাদের পারফরম্যান্স উন্নয়নের জন্য বলা যেতে পারে। এটা করতে ব্যর্থ হলে তাদের অবসায়ন করা যেতে পারে। সরকার যদি সত্যি সত্যি ব্যাংকিং সেক্টরকে ভালো করতে চায় এবং ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চায়, তাহলে কঠোর হাতে এই সেক্টরের সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

 

একুশে সংবাদ/ই.ফ.প্র/জাহা

 

Link copied!