গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছুটি ঘোষণা করে। তবে পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মনে উদ্বেগ ও শঙ্কা ক্রমেই বাড়তে থাকে। ছুটি শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের ভেতরের ভয় পুরোপুরি কাটেনি।
শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) তীব্র ভূমিকম্পের পর ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি জরুরি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুনরায় ছুটি ঘোষণা করে। তবে ছুটি শেষ হলেও শিক্ষার্থীদের ভেতরের ভয় পুরোপুরি কাটেনি। গতকাল প্রায় পাঁচবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এখনও অস্থির এবং নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতিতে ভুগছেন। এই পরিস্থিতি শিক্ষাজীবনে মনোযোগ ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে। ছুটি কিছুটা স্বস্তি দিলেও বাস্তব ভয় এখনও রয়ে গেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমিক ভূমিকম্পে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে, তার সবচেয়ে গভীর প্রভাব পড়েছে শিক্ষার্থীদের উপর।
গত কয়েকদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে পর্যায়ক্রমিক ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় মানুষের মনে যে অস্বস্তি ও ভয় তৈরি হয়েছে তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে আমরা নিরাপত্তা, বন্ধুত্ব আর শিক্ষার উদ্দীপনার জায়গা হিসেবে দেখি। কিন্তু হঠাৎ ঘনঘন ভূকম্পনে সে স্বাভাবিক পরিবেশ অস্থির হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা যারা আবাসিক হলে থাকে, তাদের রাতের ঘুম পর্যন্ত ভেঙে গেছে বারবার দুলে ওঠা ভবনের অনুভূতিতে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। ছুটি যেন কিছুটা স্বস্তি দিলেও বাস্তবতা হলো শিক্ষার্থীদের ভেতরের শঙ্কা পুরোপুরি কমেনি। ছুটি শেষ হয়ে আবার হলে ফিরে যেতে হবে, ক্লাস শুরু হবে কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি একই রকম রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুরোনো ভবন, ফাটল ধরা হল বা উচ্চতলা আবাসিক ভবনে থাকা শিক্ষার্থীদের ভয় আরও বাস্তব। অনেকেই মনে করছেন, কাঁপুনি থেমে গেলেও ঝুঁকি পুরোপুরি কাটেনি। তাই অস্বস্তির সেই অনুভূতি টানটান করে রেখেছে তাদের প্রতিটি দিন–রাত।
এমন পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় সংকট হলো তথ্যহীনতা এবং প্রস্তুতির অভাব। কীভাবে ভূমিকম্পে নিরাপদ থাকতে হয়, ভবনগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা বা নিয়মিত মহড়া অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই। ফলে প্রত্যেকে নিজের মতো করে আতঙ্ক সামলানোর চেষ্টা করছে। কেউ হলে থাকতে ভয় পেয়ে বাড়িতে চলে গেছে, কেউ আবার ক্লাসে মনোযোগ হারিয়ে অস্থিরতায় ভুগছে। অথচ এই বয়সের তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের মানসিক নিরাপত্তা, স্বস্তি ও আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নিয়মিত প্রস্তুতি মহড়া, ভবন পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ, জরুরি আশ্রয়স্থল প্রস্তুত রাখা এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেয় তাহলে অন্তত এই ভয়টুকু কমানো সম্ভব।
ভূমিকম্প থামানো আমাদের হাতে নেই, কিন্তু আতঙ্ক কমানো আমাদের দায়িত্ব। ছুটি শেষ হয়ে গেলেও যদি শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে না পারে, তবে শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা আসবে। সেই স্থবিরতা কাটাতে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, প্রস্তুতি এবং নিরাপত্তা–বিশ্বাস গড়ে তোলা। অন্যথায়, ভূমিকম্পের কাঁপুনি থেমে গেলেও শিক্ষার্থীদের মনের কাঁপুনি কিন্তু থেকেই যাবে।
শাহরিয়ার শুভ
ফার্মেসী বিভাগ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
সাম্প্রতিক ভূমিকম্পের ঘটনাটি আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের মনে গভীর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। সেই কয়েক সেকেন্ডের ভুমিকম্প এতটাই তীব্র ছিল যে এখনো অনেকে মানসিকভাবে স্থির হতে পারছি না। ক্লাসে, লাইব্রেরিতে কিংবা নিজের রুমে থাকলেও হঠাৎ মনে হয় আবার যদি ভূমিকম্প হয়? ছোট্ট শব্দেও অনেক শিক্ষার্থী আঁতকে ওঠে, ঠিক মতো ঘুমতেও পারে না। দৈনন্দিন শিক্ষাজীবনেও এই ভয় ও অস্থিরতা প্রভাব ফেলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমার প্রত্যাশা অবিলম্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করা। ক্যাম্পাসের ভবনগুলোর নিরাপত্তা মূল্যায়ন, জরুরি নির্গমন পথ নির্ধারণ, নিয়মিত ভূমিকম্প মোকাবিলার ড্রিল ও প্রশিক্ষণ এবং জরুরি নির্দেশনা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া এসব ব্যবস্থা এখন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। প্রস্তুতি যত বেশি থাকবে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কও তত কমবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা ঠেকাতে পারি না, কিন্তু সচেতনতা ও সঠিক প্রস্তুতির মাধ্যমে ক্ষতি এবং ভয়ের মাত্রা অনেকটাই কমানো সম্ভব। আমরা শুধু চাই নিজেদের জীবন, আমাদের বন্ধু-সহপাঠী এবং পরিবারের সবাই নিরাপদ থাকুক।
সবশেষে আমাদের প্রার্থনা আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি ও বিপদ থেকে রক্ষা করেন, নিরাপদে রাখেন এবং শান্তিতে জীবনযাপন করার তৌফিক দেন। প্রস্তুতি ও সতর্কতা এই দুই শক্তিই আমাদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করবে।
নাঈমা জাহান আদিবা
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
একজন শিক্ষার্থী হিসেবে, আমি মনে করি এই শঙ্কা বা আতঙ্ক মূলত দুটি প্রধান কারণে তৈরি হচ্ছে: কাঠামোগত ঝুঁকি এবং প্রস্তুতির অভাব।
১. কাঠামোগত ঝুঁকি ও জীবনভীতি
আমাদের শিক্ষাজীবন কাটে মূলত ক্লাসরুম ও ছাত্রাবাসে। এই ভবনগুলোর নিরাপত্তা নিয়েই আমাদের সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ:
ঝুঁকিপূর্ণ আশ্রয়: দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন বহু পুরোনো এবং দুর্বল। সামান্য কম্পনে যখন দেয়ালে ফাটল দেখা দেয় বা পলেস্তারা খসে পড়ে, তখন এই ভবনগুলো আমাদের কাছে আর শিক্ষাকেন্দ্র থাকে না বরং মনে হয় এক-একটি `মৃত্যুফাঁদ`। নিরাপত্তাহীনতার এই চরম অনুভূতি নিয়ে ক্লাসে বসা বা রাতে হলে ঘুমানো সত্যিই কঠিন।
পড়াশোনায় প্রভাব: এই অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক সরাসরি আমাদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। মানসিক চাপ এতটাই বেশি যে, মনোযোগ ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ার পথে এই শঙ্কা বড় বাধা সৃষ্টি করছে।
২. প্রস্তুতির অভাব এবং উদ্বেগের বিস্তার
আরেকটি বড় কারণ হলো দুর্যোগ মোকাবিলায় কার্যকর প্রস্তুতির অভাব:
মহড়ার অভাব: বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ও বাস্তবসম্মত ভূমিকম্প মহড়া হয় না। ফলে, কম্পন শুরু হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা থাকে না। এই অনিশ্চয়তা আতঙ্ককে আরও বাড়িয়ে তোলে।
মানসিক সহায়তা নেই: ঘন ঘন এই দুর্যোগের পর শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কোনো ধরনের কাউন্সেলিং বা মনোসামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা সাধারণত রাখা হয় না। ট্রমা নিয়েই আমাদের আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাধ্য করা হয়।
আমাদের প্রত্যাশা (শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি)
এই শঙ্কা কাটাতে, কর্তৃপক্ষকে কেবল প্রতিশ্রুতি নয়, জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে: নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: অবিলম্বে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভবনের নিরাপত্তা নিরীক্ষা করা হোক এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দ্রুত সংস্কার বা নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হোক।
বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ: বছরে অন্তত দু`বার ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে বাস্তবসম্মত মহড়া আয়োজন করা হোক, যাতে আমরা শেখা জ্ঞান প্রয়োগ করে জীবন রক্ষা করতে পারি।
মানসিক সহায়তা কেন্দ্র: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা চালু করা হোক।
শিক্ষার্থী হিসেবে, আমরা চাই একটি নিরাপদ ও দুশ্চিন্তামুক্ত পরিবেশে আমাদের জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়া এগিয়ে যাক। সরকারের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এই শঙ্কা কাটাতে এবং শিক্ষাজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে।
মোঃ জহুরুল হক
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট,ক্লাস,বাসায় ফেরা,অনলাইন স্ক্রোলিং,খাওয়া, ঘুম ইত্যাদি নিয়মের শেকলে বাধা ব্যস্তময় জীবনে আকস্মিক ভূমিকম্প! এ যে পুরো একটা জাতির মন-মস্তিস্ককে মুহূর্তেই নাড়িয়ে দিলো। সাধারণত ভূমিকম্পের সাথে আমরা সবাই কম- বেশি পরিচিত। তাই বলে,পরপর এতোগুলো ভূমিকম্প! নাহ,এটা কোনো ফেলে দেওয়ার মতো ব্যাপার নয়।বিশেষ করে রাজধানীতে এখন শিশু, কিশোর, প্রাপ্তবয়স্ক সবাই অনিশ্চিত জীবনের শেষ মুহূর্ত নিয়ে বেশ শঙ্কিত। যেসব শিক্ষার্থীরা পরিবার-পরিজন ছেড়ে পড়াশোনার তাগিদে এই মৃত্যুপুরীতে পাড়ি জমিয়েছে,তারা ভাবছে এ কেমন বিদায় হবে আমাদের! কারন,এই শহরে হোস্টেল, ভাড়া বাসা,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,রাস্তাঘাট সব কিছুই অপরিকল্পিত। সবকিছুই যেন মরণফাঁদ। মাত্র কয়েকদিনের ব্যাপ্তিতে এতো ভূমিকম্প কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকতে দিচ্ছে না।অতি উৎসুক এপ্রজন্ম না পাড়ছে ক্লাস,পরীক্ষা, প্রেজেন্টশন ছেড়ে শান্তির নীড়ে ফিরতে,আর না পাড়ছে স্বস্তিতে বাঁচতে। কেউ হয়তো হ্যালুসিনেট করছে,কেউবা প্যানিক অ্যাটাকের শিকার হচ্ছে,কারো মাথা ঘুড়ছে।নয়তো কারো রাতের ঘুম হাড়িয়ে গেছে।এই বুঝি বিল্ডিং ধসে পড়লো।এই বুঝি চাঁপা পড়লাম। এটাই বুঝি শেষ মুহূর্ত। যে পড়াশোনার জন্য তারা পরিবার ছেড়ে এসেছে, সেটাও ভালো মতো করতে পারছে না।এতো এতো মৃত্যুভয়, এতো অনিশ্চিয়তা যেন বেঁচে থাকার আনন্দে ছাঁই ঢেলে দিয়েছে। তার উপর রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাহাড়সম আতঙ্কবাণী,মিডিয়া কাভারেজে ভয়াবহতা আর হার্টব্রেকিং হেডলাইনস।এযুগের শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব বেশি সক্রিয় হওয়ায় এর প্রভাবও শিক্ষার্থীদের বেশি শঙ্কিত করে তুলছে।তাই এই শঙ্কা দূর করতে দরকার পজিটিভ মিডিয়া কাভারেজ,বিবেচিত হেডলাইনস,ভূমিকম্পের সতর্কতা ও প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবেদন,বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিং এর আয়োজন করা।তবেই হয়তো শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক হতে পারবে।মৃত্যুভয় আর তিলে তিলে শেষ করবে না তাদের।স্বাভাবিক হবে তাদের চিন্তা শক্তি। আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হবে তারা।
খাতুনে জান্নাত রাকা
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ,
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ছুটি যেন কিছুটা স্বস্তি দিলেও বাস্তবতা হলো শিক্ষার্থীদের ভেতরের শঙ্কা পুরোপুরি কমেনি। ছুটি শেষ হয়ে আবার হলে ফিরে যেতে হবে, ক্লাস শুরু হবে কিন্তু নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি একই রকম রয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে তারা আবার শান্তি ও স্বস্তির সঙ্গে তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

