দীর্ঘ দুই দশক পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়। বৈঠকে পাকিস্তান বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তি, হালাল ফুড ও নৌপরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়াতে একাধিক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) প্রস্তাব করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে যৌথভাবে সংবাদ ব্রিফিং করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি দেওয়ার প্রস্তাব করেছে এবং বাংলাদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনে আগ্রহ জানিয়েছে। নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণের জন্য ব্যবহৃত বিশেষ কালি আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগও চেয়েছে পাকিস্তান। ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়েও আলোচনা হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা।
২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগ জোরদার হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে উভয় দেশ। পাকিস্তান বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য মডেল অনুসরণে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে সম্মতি জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
তাছাড়া, পাকিস্তান বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে সিমেন রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে। পাশাপাশি দুই দেশের শিপিং করপোরেশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ এখন পাকিস্তানের করাচি বন্দর ট্রাস্ট (কেপিটি) ব্যবহার করতে পারবে।
এ ছাড়া, আইসিটি, সাইবার নিরাপত্তা ও ডিজিটাল পরিচয় ব্যবস্থায় সহযোগিতা বাড়াতে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব করেছে পাকিস্তান। হালাল ফুড সেক্টরে বিএসটিআই এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। চিনি শিল্পেও কারিগরি সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “দুই দশক পর এমন একটি সভা অনুষ্ঠিত হলো। আমরা কৃষি, বাণিজ্য, খাদ্য ও প্রযুক্তি খাতে গঠনমূলক আলোচনা করেছি। এতে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হবে।”
পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। পাট ও ওষুধ খাতে বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

