দেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে যথাশীঘ্রই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন—এমন মন্তব্য করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এবং ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগেই নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে বলে আশা করেন তিনি।
বুধবার (২১ মে) সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে অনুষ্ঠিত অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পরিস্থিতি নিয়ে খোলামেলা বক্তব্য দেন। সভায় তিনি বলেন, “মানবিক করিডরের মতো স্পর্শকাতর সিদ্ধান্ত বর্তমান অর্নির্বাচিত সরকারের এখতিয়ারে পড়ে না। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে বৈধভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রয়োজন।”
সভায় অংশ নেওয়া সেনা কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, সেনাপ্রধান ‘There will be no corridor’ বলে সরাসরি ঘোষণা দেন, যা জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর কঠোর অবস্থান নির্দেশ করে।
তিনি বলেন, “দেশে বর্তমানে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সময়ের সঙ্গে তা আরও খারাপ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও বেসামরিক প্রশাসন ভেঙে পড়েছে। কেবলমাত্র সশস্ত্র বাহিনী এখনো দেশকে ধরে রেখেছে।”
সেনাপ্রধান অভিযোগ করেন, দেশি-বিদেশি কিছু মহল ইচ্ছাকৃতভাবে পরিস্থিতিকে ঘোলা করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী ও তাঁর নিজস্ব অবস্থানকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জাতিসংঘের তৈরি একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সেখানে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য রাখা হয়নি এবং সরকার জাতিসংঘকে এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেয়নি।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নিয়েও সেনাপ্রধান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এই সরকারের এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ন্যূনতম নৈতিক এখতিয়ার নেই।”
সেনাপ্রধান বলেন, “একটি নির্বাচিত সরকারই কেবল সেনাবাহিনীর প্রকৃত অভিভাবক। আমি নয় মাস ধরে সেই অভিভাবকত্ব ছাড়া কাজ করছি। আমরা সবাই একটি নির্বাচিত সরকার দেখার অপেক্ষায় আছি—যেটি অভিভাবকত্ব পালন করবে।”
তিনি আরও বলেন, “১ জানুয়ারি ২০২৬-এর মধ্যে একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব নেবে—এটি নিশ্চিত করতে হবে। না হলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও চরম ঝুঁকিতে পড়বে।”
অফিসারদের উদ্দেশ্যে সেনাপ্রধান বলেন, তারা যেন সর্বোচ্চ আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে নিরপেক্ষ থেকে আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় এক অফিসারের প্রশ্নের উত্তরে সেনাপ্রধান বলেন, “মজলুমদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। যাতে তাদের চোখে আর অশ্রু না ঝরে।”
একুশে সংবাদ/চ.ট/এ.জে