মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে সাবেক আইজিপি মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালের প্রথম মামলাটি (বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। একই বছরের ১৭ অক্টোবর প্রথম বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং সেদিনই ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
প্রথমে মামলায় একমাত্র আসামি ছিলেন শেখ হাসিনা। পরে চলতি বছরের মার্চে প্রসিকিউশনের আবেদনে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল এবং সাবেক আইজিপি মামুনকে আসামি হিসেবে যুক্ত করেন ট্রাইব্যুনাল।
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে তিন আসামির বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে— উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ, ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা, রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যা, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো ।
মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে রয়েছে—২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠার তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠার জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণ, ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার শহীদ তালিকা ।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর ১ জুন তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে।
বিচার চলাকালে দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হতে আবেদন করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য দেন।
গত ২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন জানান। পরে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামও একই দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন তাদের বক্তব্যের জবাবে হাসিনা–কামালের খালাস প্রার্থনা করেন। পরে ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার তারিখ ১৩ নভেম্বর নির্ধারণ করে।
প্রথম অভিযোগ : ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্য করে উত্তেজনামূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সমন্বয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক আক্রমণ হয়। গুলিতে নিহত হন দেড় হাজারের বেশি মানুষ, আহত প্রায় ২৫ হাজার।
দ্বিতীয় অভিযোগ : হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের নির্মূলের নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি সে নির্দেশ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীকে সক্রিয় করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল ও সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে আলাপচারিতার দুটি অডিও রেকর্ড এ অভিযোগকে আরও শক্তিশালী করে।
তৃতীয় অভিযোগ : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনজনই অভিযুক্ত।
চতুর্থ অভিযোগ : রাজধানীর চানখারপুলে আন্দোলনরত ছয়জন নিরস্ত্র নাগরিককে গুলি করে হত্যার দায়েও তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ : আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগেও একই তিনজনের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

