জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান বর্তমানে পলাতক এবং ভারতে অবস্থান করছেন।
ট্রাইব্যুনাল জানায়, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে সত্য উদ্ঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ফলে তার অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য হলেও তা হ্রাসের সুপারিশ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম অভিযোগ : গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এর পরপরই তৎকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর সমন্বিত হামলা চালায়। গুলিতে দেড় হাজার মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
দ্বিতীয় অভিযোগ : হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের দমন ও নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি সেই নির্দেশ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগান।
এ সংক্রান্ত দুটি অডিও রেকর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামাল এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনও উপস্থাপন করা হয়।
এই নির্দেশনা আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের মধ্যেও পৌঁছায়। ফলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তিন আসামির বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির অভিযোগ গঠন করা হয়।
তৃতীয় অভিযোগ :রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও আইজিপি মামুনকে দায়ী করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ : রাজধানীর চানখাঁরপুলে আন্দোলনরত নিরীহ ছয়জনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগেও একই তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
পঞ্চম অভিযোগ : আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনাতেও শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

