আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মানবতাবিরোধী অপরাধের তিন পৃথক মামলায় সেনাবাহিনীর ১৫ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলে টিএফআই ও জেআইসি সেলে সংঘটিত গুম-খুনসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এই আদেশ দেওয়া হয়।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এই নির্দেশ দেন। বেঞ্চের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিন মামলায় মোট ২৮ আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনা কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে ছিলেন। এর মধ্যে ১৪ জন কর্মরত কর্মকর্তা এবং একজন অবসরকালীন ছুটিতে রয়েছেন।
বুধবার সকাল ৭টার পর প্রিজনভ্যানে করে সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। তারা সাধারণ পোশাকে হাজির হন।
প্রথম মামলাটি আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। দ্বিতীয়টি জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সময় রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে।
গুম-নির্যাতন সংক্রান্ত মামলায় মোট ১৭ জন আসামির মধ্যে সেনা হেফাজতে থাকা কর্মকর্তারা হলেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অব.), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।
এই মামলার পলাতক আসামিদের মধ্যে রয়েছেন র্যাবের সাবেক তিন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ (পরে আইজিপি), এম খুরশিদ হোসেন ও মো. হারুন-অর-রশিদ। এ ছাড়া আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, তার প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলামকে—তারা সবাই পলাতক।
অন্য মামলাটিতে ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন পরিচালক—মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী—বর্তমানে সেনা হেফাজতে ছিলেন।
একই মামলায় ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী এবং মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হককেও আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহম্মেদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হকের নামও রয়েছে অভিযোগপত্রে। তাদের অবস্থান সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তৃতীয় মামলাটি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই মামলার আসামিরা হলেন— বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম এবং সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান। এর মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন, অন্য দুইজন পলাতক।
একুশে সংবাদ/এ.জে