মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সুবিধার্থে ঘোষিত আংশিক যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় রক্তাক্ত হয়েছে অবরুদ্ধ গাজা। নিহত হয়েছেন অন্তত ৬২ জন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ৩৪ জনই ছিলেন ত্রাণ সহায়তা নেওয়ার অপেক্ষায় থাকা সাধারণ মানুষ। রোববার (২৭ জুলাই) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানায়।
এর আগে, আন্তর্জাতিক চাপে সাড়া দিয়ে ইসরায়েল ঘোষণা দেয় যে, গাজার নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তারা সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে। এই সিদ্ধান্তকে তারা ‘মানবিক বিরতি’ হিসেবে উল্লেখ করে। তবে বাস্তবে সেই বিরতি কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ উঠে।
রয়টার্স জানায়, আল-মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা সিটির কিছু অংশে ইসরায়েল বাহিনীর সামরিক তৎপরতা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার প্রতিশ্রুতি দিলেও ওইসব এলাকাতেই হামলা হয়েছে বলে খবর মিলেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করে, প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাদ্য ও ওষুধবাহী যানবাহনের জন্য নির্ধারিত করিডোর উন্মুক্ত রাখা হবে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, যথাযথ বিকল্প রুট না দেওয়ায় ত্রাণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে, মিসরের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আল-কাহেরা নিউজ জানায়, রোববার থেকে মিসরীয় সীমান্ত দিয়ে গাজার দিকে ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইসরায়েলও আকাশপথে ত্রাণ ফেলার কথা জানায়, যদিও তা পর্যাপ্ত নয় বলে দাবি করছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানবিক বিরতির ঘোষণার পরেও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কার্যকর সহযোগিতা না পাওয়ায় সহায়তা বিতরণ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারছে না।
রয়টার্স বলছে, গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সম্প্রতি জানান, হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা তারা স্থগিত করেছে, কারণ তাদের মতে, হামাস কোনো আপসে আগ্রহী নয়।
প্রসঙ্গত, চলমান সংঘাতের শুরু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর। এর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে প্রায় পুরো জনসংখ্যা।
এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চলমান অবরোধে তীব্র খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে ভুগছে ২২ লাখের বেশি মানুষ। অপুষ্টিজনিত কারণে এরই মধ্যে ১২৭ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮৫ জনই শিশু।
ইসরায়েল দাবি করছে, তারা ত্রাণ সরবরাহে বাধা দিচ্ছে না, বরং জাতিসংঘের অপারগতা দায়ী বিতরণে বিলম্বের জন্য। যদিও জাতিসংঘ পাল্টা দাবি করেছে, ইসরায়েলের আরোপিত বিধিনিষেধের মধ্যেও তারা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে