হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরাল্লাহ স্বীকার করেছেন, তার শক্তিশালী গোষ্ঠী ‘বড় ও নজিরবিহীন’ আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। কারণ তার গোষ্ঠীর হাজার হাজার সদস্যের যোগাযোগ ডিভাইস বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে। গোষ্ঠীটি এর জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে। হামলার পর বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দেওয়া ভাষণে নাসরাল্লাহ ইসরায়েলের জন্য সতর্কবার্তাও দিয়েছেন।
গত মঙ্গল ও বুধবার লেবাননে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী হামলার পর নাসরাল্লাহ এদিন চ্যালেঞ্জিং সুরে বক্তব্য দেন। তিনি সতর্ক করে দেন, ইসরায়েল সব সীমা অতিক্রম করেছে এবং এই হামলার জন্য তারা ‘যথাযথ শাস্তি’ পাবে।
এই হামলাগুলোকে সম্ভাব্য ‘যুদ্ধ শুরুর উদ্যোগ’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ইসরায়েলকে ‘কঠোর প্রতিশোধ ও যথাযথ শাস্তি’ ভোগ করতে হবে, তারা যেখানে প্রত্যাশা করে এবং যেখানে করে না সেখানেও।
একই সঙ্গে নাসরাল্লাহ এই হামলাগুলোকে ‘যুদ্ধাপরাধ বা যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে একে ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেন।
অভিযোগ করেন, ইসরায়েল এ হামলার মাধ্যমে দুই মিনিটে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
এর আগে বুধবার লেবাননে পেজার বিস্ফোরণের ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছিলেন, যুদ্ধের নতুন পর্ব শুরু করেছে তার দেশ।
নাসরাল্লাহ এদিন আরো প্রতিশ্রুতি দেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর লড়াই অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, ‘গাজায় আক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত লেবানন ফ্রন্ট থামবে না। এসব রক্তপাত সত্ত্বেও।’
নাসরাল্লাহ এই হামলাগুলোর বিষয়ে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ ও কিছু ইসরায়েলি গণমাধ্যম বলেছে, এ হামলাগুলো ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের চিহ্ন বহন করে।
এছাড়া নাসরাল্লাহ ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিও সমালোচনা করেন। যেখানে বলা হয়েছিল, সীমান্তে গোলাগুলির কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া হাজার হাজার ইসরায়েলিকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হবে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আপনি উত্তরাঞ্চলের মানুষদের উত্তরাঞ্চলে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবেন না। কোনো সামরিক উত্তেজনা, কোনো হত্যাকাণ্ড, কোনো গুপ্তহত্যা এবং কোনো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধই বাসিন্দাদের সীমান্তে ফিরিয়ে আনতে পারবে না।’
হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মিত্র। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ওপর হামাস নজিরবিহীন হামলা চালায়। তার পর থেকে গাজায় সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ চলছে। পাশাপাশি ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তে লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিন সংঘর্ষ হচ্ছে। এই সহিংসতায় লেবাননের পক্ষে শত শত এবং ইসরায়েলের পক্ষে বেশকিছু লোক নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই যোদ্ধা।
এদিকে লেবাননে সম্প্রতি ঘটা পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের ঘটনায় ইসরায়েল এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। দুই দিনে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ৩৭ জন নিহত এবং প্রায় তিন হাজার জন আহত হয়েছে। তবে ইসরায়েল গাজায় তাদের যুদ্ধের পরিধি প্রসারিত করে লেবানন ফ্রন্টকে অন্তর্ভুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি নাসরাল্লাহ টেলিভিশনে ভাষণ দেওয়ার সময়ও ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান বৈরুতের ওপর দিয়ে তীব্র গতিতে উড়ে যায়।
সূত্র: আল-জাজিরা
একুশে সংবাদ/ এস কে
আপনার মতামত লিখুন :