ঈদুল আজহার প্রাক্কালে প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক প্রবণতায় আবারও বাড়ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ৪ জুন পর্যন্ত দেশে মোট (গ্রোস) রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ০৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আইএমএফের গৃহীত হিসাব পদ্ধতি (বিপিএম-৬) অনুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ২০ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তথ্যে দেখা যাচ্ছে, ব্যয়যোগ্য বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখনো ১৬ বিলিয়নের ঘরে রয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে বৈদেশিক লেনদেনে চাপ অনেকটাই কমেছে। ডলারের বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার পরও মূল্য ১২৩ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি, ব্যাংকগুলো এখন গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী এলসি খোলার সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে, ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও দামও স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে।
এর আগে আকু’র মার্চ-এপ্রিল মাসের আমদানি বিল বাবদ ১.৮৮ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর গত ৬ মে মোট রিজার্ভ কমে গিয়ে ২৫ বিলিয়নে দাঁড়িয়েছিল। বিপিএম-৬ অনুযায়ী তখন প্রকৃত রিজার্ভ নেমেছিল ২০ বিলিয়ন ডলারে। তবে ঈদ সামনে রেখে প্রবাসী আয় বেড়ে যাওয়ায় আবারও রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের প্রথম তিন দিনে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৬০ কোটি ৪০ লাখ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭ হাজার ৪২৯ কোটি টাকা)। এর আগে মে মাসে দেশে এসেছিল ২৯৭ কোটি ডলার— দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মাসিক রেমিট্যান্স। মার্চে এসেছিল সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরু থেকে চলতি জুনের ৩ তারিখ পর্যন্ত দেশে এসেছে ২ হাজার ৮১১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। এমন প্রবৃদ্ধিকে অর্থনীতিবিদরা বলছেন "অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ইতিবাচক বার্তা।"
অন্যদিকে রপ্তানিতেও দেখা গেছে দৃঢ়তা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) জানায়, গেল মে মাসে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৭৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে মোট রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি ডলার— যা গত বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর রিজার্ভে এমন প্রবৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক অর্থনৈতিক স্থিতি ও আমদানি সক্ষমতার জন্য বড় ইতিবাচক বার্তা। তবে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়ে যাচ্ছে— এই ধারা কতটা ধরে রাখা যায় এবং বাজারে মুদ্রানীতির ভারসাম্য কতটা বজায় রাখা যায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
একুশে সংবাদ/আ.ট/এ.কে