AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

রাজশাহীর বিচারক পরিবারের ট্র্যাজেডি: রক্তক্ষরণে ঝরে গেল তাওসিফের জীবন


Ekushey Sangbad
আব্দুল বাতেন, রাজশাহী
০৩:৩৬ পিএম, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫

রাজশাহীর বিচারক পরিবারের ট্র্যাজেডি: রক্তক্ষরণে ঝরে গেল তাওসিফের জীবন

রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আব্দুর রহমানের ১৬ বছরের ছেলে তাওসিফ রহমান সুমনের স্বাভাবিক এক বিকেল মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল এক নির্মম দুঃস্বপ্নে। মাত্র নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাওসিফ-স্বপ্ন, ভবিষ্যৎ আর হাসিখুশি জীবনে ভরা এক কিশোর। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেলের সেই ভয়াবহ হামলায় সবকিছু তছনছ হয়ে যায়।

পরদিন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গে শুরু হয় তাওসিফের ময়নাতদন্ত। সকাল পৌনে ১০টার দিকে শুরু হওয়া এই প্রক্রিয়া চলে প্রায় আধঘণ্টা। বাইরে উদ্বেগে অপেক্ষায় ছিলেন বাবা-বিচারক আব্দুর রহমান। সন্তানের মৃত্যুর কারণ কী, কীভাবে ঘটল এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড-সব প্রশ্ন নিয়ে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন মর্গের দরজার সামনে। এমন মুহূর্তে কোনো বাবার মানসিক অবস্থা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন।

ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কফিল উদ্দিন জানান তাওসিফের মৃত্যুর মূল কারণ-অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ। তার ডান ঊরু, ডান পা এবং বাঁ বাহুতে ধারালো ও চোখা অস্ত্রের আঘাতে গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালি কেটে যায়। শুধু বাহ্যিকই নয়, শরীরের ভেতরেও হয়েছিল রক্তক্ষরণ। এত অল্প সময়েই তার জীবন শেষ হয়ে যায়।

তবে বিষয়টি আরও শিউরে উঠার মতো। পুলিশের সুরতহালে উল্লেখ করা ‘গলার কালশিরা দাগ’ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডা. কফিল জানান, নরম কাপড় দিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাগটি হতে পারে। অর্থাৎ, তাওসিফকে হত্যা করতে হামলাকারী শুধু ধারালো অস্ত্রই নয়, শ্বাসরোধের পদ্ধতিও ব্যবহার করেছিল। যদিও শ্বাসরোধ মৃত্যুর প্রধান কারণ নয়, তবু দুটো কাজ একই সময়ে হয়েছে বলেই তার ধারণা।

হামলাকারী লিমন মিয়া (৩৫)-পরিবারের পরিচিতই ছিলেন। এ কারণে সেদিনের বিকেলে কেউ হয়তো এমন শত্রুতার আশঙ্কা করেননি। কিন্তু পরিচয়ই হয়ে উঠল সর্বনাশের সূচনা। সেই হামলায় গুরুতর আহত হন তাওসিফের মা তাসমিন নাহার লুসী (৪৪)। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ধস্তাধস্তির সময় হামলাকারী লিমনও আহত হয় এবং এখন পুলিশের হেফাজতে চিকিৎসা নিচ্ছে।

এই ঘটনায় শুক্রবার বেলা ১১টা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি বলে রাজপাড়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন।

দুপুরের দিকে জানা যায়, তাওসিফের মরদেহ দাফনের জন্য নেওয়া হবে তাদের গ্রামের বাড়ি-জামালপুরে। এক মেধাবী, প্রাণবন্ত কিশোরের দাফনযাত্রা সেই শান্ত গ্রামেই শেষ হবে, যেখানে লিখতে পারত তার ভবিষ্যতের নতুন গল্প।

একটি পরিবার, একটি শহর ও একটি সমাজ আজ শোকাহত। তাওসিফের মৃত্যু শুধু একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ নয়, বরং প্রশ্ন তুলে দিল পরিচিত মানুষের মধ্যেও কী ভয়াবহ লুকিয়ে থাকতে পারে। ন্যায়বিচারের প্রয়োজনে, সত্য জানার আশায় রাজশাহী আজ তাকিয়ে আছে তদন্তকারীদের দিকে।

তাওসিফের জন্য আজ যারা শোক করছে-তারা জানে, এই শোক শুধু ব্যক্তিগত নয়। এটি এক সামাজিক ক্ষতি, এক কিশোরের অসমাপ্ত জীবনের বেদনাময় অধ্যায়।

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!