পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের বাহেরচর ও আঙ্গারিয়া গ্রাম এখন পায়রা নদীর ভয়াল ভাঙনে প্রায় নিশ্চিহ্ন। গত কয়েক বছরে নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, বাগান, কবরস্থান, এমনকি মসজিদ ও মন্দিরও। প্রতিদিন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ২০-৩০টি পরিবার—কবে তাদের ঘরও নদীর গর্ভে বিলীন হবে সেই আশঙ্কায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নদীভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) একটি মেইনটেনেন্স প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তবে সেটি কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। নদীতে জিও ব্যাগ ফেলার কথা থাকলেও ঠিকাদার সেগুলো নদীর পাড়ে ফেলে রেখে চলে গেছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।
সরেজমিনে দেখা যায়, পায়রা নদীর স্রোত আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে বহু পরিবার এখন পাউবোর ভেড়িবাঁধের পাশে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। চোখেমুখে ভয়, অনিশ্চয়তা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর হতাশা।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির শিকদার বলেন, “সরকার বরাদ্দ দেয় ঠিকই, কিন্তু কিছু অসাধু ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাজ হয় না। গত সপ্তাহে পটুয়াখালী পাউবো অফিসে গিয়ে অনুরোধ করেছি দ্রুত জিও ব্যাগ ফেলার জন্য, কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি।”
রুহুল আমিন হাওলাদার, আরেক ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দা, বলেন, “বাহেরচর তো শেষ, এখন আঙ্গারিয়াও ভাঙছে। জমি কেনার মতো সামর্থ্য নেই, তাই উদ্বাস্তু হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।”
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পুর) মো. রাকিব বলেন, “দ্রুত মেইনটেনেন্স প্রকল্প বাস্তবায়নে ঠিকাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু না করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাউবোর ওই প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সহিদ–খুশি এন্টারপ্রাইজ’-এর মালিক মো. সহিদুল ইসলামের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
আঙ্গারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, “বাহেরচর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, এখন আঙ্গারিয়াও ভাঙনের মুখে।” তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, “তবে তা বাস্তবায়নে সময় লাগবে।”
দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. এজাজুল হক বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা শেষ হলে সহায়তা প্রদান করা হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে