নাটোর-১ (লালপুর -বাগাতিপাড়া) আসনে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে চার খন্ডে বিভক্ত বিএনপি। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
আগামী নির্বাচনে বিএনপির এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে ভোটারের কাছে উপস্থাপন করতে এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন জামায়াতের সম্ভাব্য একক প্রার্থী লালপুর উপজেলা জামাতের আমির ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মওলানা আবুল কালাম আজাদ। পাশাপাশি মাঠে সরব রয়েছে এবি পার্টির জেলা সদস্য সচিব এএসএম মোকাররেবুর রহমান নাসিম। এদের বাইরে আর কোন দলের প্রার্থীদের মাঠে দেখা না গেলেও নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে খেলাফত মজলিসের ড. আজাবুল হক, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির আনছার আলী দুলাল, সাম্যবাদি দলের নাটোর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষক সমিতির সেক্রেটারি মনজুরুল ইসলাম মিঠু।
নাটোর-১ সংসদীয় এলাকার লালপুর -বাগাতিপাড়া দুটি উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মোট ভোটার রয়েছে তিন লক্ষ ৪৯ হাজার ৩৯২ জন।
সরেজমিন জানা যায়, নাটোর-১ আসনে বিএনপির চার মনোনয়ন প্রত্যাশীকে ঘিরে চার ধারায় পরিচালিত হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল ততই দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রতিটি দলীয় কর্মসূচিতে পৃথকভাবে শোডাউন করা হচ্ছে। দলীয় কর্মকাণ্ডে লোকসমাগম ঘটিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের অপরিহার্যতা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। একে অপরের প্রতি করছে বিষোদগার। কুৎসা রটনায় একজন আরেক জনকে ঘায়েল করছে প্রতিনিয়ত। বিএনপির সাবেক যুব ও ক্রিড়া প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটল এর মেয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফারজানা শারমিন পুতুল, ছেলে লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডাক্তার ইয়াসির আরশাদ রাজন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য ( সংরক্ষিত নারী আসন-৪১) সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া পৃথক চারটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, বিএনপির চতুরমূখী দ্বন্দ্বের সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন জামাতের মওলানা আবুল কালাম আজাদ। সব উসকানি ও মন্তব্য পাশ কাটিয়ে তিনি সংগঠনকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করছে। এতে আগামী নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটিখ্যাত লালপুর -বাগাতিপাড়ায় কি চমক দেখাতে পারবেন, নাকি দ্বন্দ্ব ভুলে একীভূত হয়ে বিএনপি তাদের আসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে-ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে এলাকায় এমন নানা আলোচনা চলছে।
স্থানীয় ও সাধারণ ভোটাররা জানায়, এই আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে তৈরি করতে মরহুম ফজলুর রহমান পটল ও তার পরিবার অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তার পরিবারকে আবারও এমপি-মন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায় সাধারণ মানুষ। ধানের শীষ এই এলাকার মানুষের প্রিয় প্রতীক। দ্বন্দ্ব ভুলে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এক হয়ে গেলে দলের পক্ষে ভোট বিপ্লব ঘটতে পারে।
লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ হারুনার রশিদ পাপ্পু, লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও বিলমাড়ীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিদ্দিক আলী মিষ্টু ও গোপালপুর পৌর বিএনপির সাবেক আহবায়ক, সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম মোলাম তারা বলেন, বার বার নির্বাচিত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মরহুম ফজলুর রহমান পটল এর নিজ হাতে সংগঠিত বিএনপির এই সংগঠনের দায়িত্ব নেয় তাঁর স্ত্রী ঢাকার মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যক্ষ কামরুন্নাহার শিরিন। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। তার বয়সের কারনে পরিবারের সিদ্ধান্ত আসে তার কন্যা বিএনপির পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য, মিডিয়া সেলের সদস্য, নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ব্যারিষ্টার ফারজানা শারমিন পুতুলের উপর।ফারজানা শারমিন পুতুল তরুণ, পরিশ্রমী সংগঠক ও চৌকস নেতা। দুর্দিনে দল ও নেতাকর্মীদের পাশে থাকা এবং বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে কাজ করার সফলতাই আগামী নির্বাচনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পুতুলকে ধানের শীষ প্রতীক উপহার দেবেন।
ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, বিএনপির ৩১ দফা নিয়ে সারা দেশে কাজ করছি এবং সবসময় জনগণের পাশে থেকে দলের দেওয়া সকল দায়িত্ব পালন করেছি। দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই আমার আর্শীবাদ।
ডাক্তার ইয়াসির আরশাদ রাজন এর অনুসারী লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আশরাফুল আলম লুলু বলেন, দলীয় সকল দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে এবং দূর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ডাক্তার ইয়াসির আরশাদ রাজন। তিনিই মনোনয়ন পাবেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।
ইয়াসির আরশাদ রাজন বলেন,আমাদের পরিবারের নেতৃত্বে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ আছে। জনগনই আমার জন্য মনোনয়ন চাইবে।
তাইফুল ইসলাম টিপুর অনুসারী লালপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আরিফুল ইসলাম আরিফ ও সহকারী অধ্যাপক মোঃ সাজেদুল ইসলাম হলুদ বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক মোঃ তাইফুল ইসলাম টিপু দীর্ঘদিন ধরে দলের সুদিন ও দুর্দিনে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বাস করি দল তাকেই মনোনয়ন দেবে এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনিই বিজয়ী হবেন।
তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, জনপ্রিয়তার মানদন্ডে ও দলের প্রতি আস্থার কারণে আমি মনোনয়নের হকদার।
সৈয়দা আসিয়া আশরাফী পাপিয়া বলেন, একসময় চাপাইনবয়াবগঞ্জ জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী করেছি এখন জন্মভূমি নাটোর -১ আসনের ভাগ্য উন্নয়নে মনোনয়ন চায়।
বাগাতিপাড়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জাকির হোসেন বলেন, জামাতের প্রার্থীকে জয়ী করতে পোলিং এজেন্ট, সেন্টার কমিটি সহ সকল প্রস্তুতি শেষ করেছি।
লালপুর উপজেলা জামায়াতের আমির মওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, দূর্নীতি ও চাঁদা মুক্ত জনগণের হক পূরনের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন করতে চায়।
একুশে সংবাদ/এ.জে