দেশের রাজনীতির অস্থির ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রতিদিন বাড়ছে উত্তাপ। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে হিসাব-নিকাশ, আঁতাত ও কৌশলের খেলা। কেউ স্বপ্ন দেখছে এককভাবে ক্ষমতার সবটুকু দখলে নেওয়ার, আবার কেউ জোটসঙ্গীকে আঁকড়ে ধরে পুরনো রাজনীতির কৌশলকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনীতি মূলত দুই দলের ছত্রছায়ায় আবর্তিত হলেও, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর নতুন এক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলকে, এখন মাঠে টিকে আছে কেবল বিএনপি। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ছোট দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ অবস্থান। তারা আর বড় দলের অনুকম্পায় টিকে থাকতে চায় না; বরং নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ অনুযায়ী অংশ নিতে আগ্রহী।
ইতিমধ্যেই ছোট দলগুলো পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের দাবি জানিয়েছে এবং এ দাবি না মানলে নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছে। যদি জামাত-চরমোনাই ও অন্যান্য ইসলামপন্থী শক্তি বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, তবে বিএনপি পড়বে মহাবিপাকে এবং নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। প্রাথমিকভাবে একক ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর বিএনপি এখন মরিয়া হয়ে ছোট দলগুলোর দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু এবার ছোট দলগুলোও অনড়; এক আসনের পরিবর্তে তারা ১০ আসন পর্যন্ত দাবি তুলছে এবং না মানলে ‘সাথে নাই’ বলে স্পষ্ট জানাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে বিএনপির নীতি-নির্ধারক মহল জোটসঙ্গী সংগ্রহের জন্য হেভিওয়েট একাধিক নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে। মাঠের বাস্তবতায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনসহ চট্টগ্রামের একাধিক আসন এবার বিএনপির হাতছাড়া হয়ে জোটসঙ্গীর হাতে যেতে পারে। অতীতে বিএনপি কখনো স্থানীয় কাউকে মনোনয়ন দিয়ে এই আসন থেকে সফল হতে পারেনি।
ঐতিহাসিকভাবে, স্বাধীনতার পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ফটিকছড়ি আসন থেকে বিএনপির টিকিটে নির্বাচিত হয়েছেন সীতাকুণ্ডের আবুল হাসনাত লুৎফুল কবির সিদ্দিকী। এরপর ২০০৮ সালে রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিজয়ী হন। স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দলীয় কোন্দল এবং অতীতের ব্যর্থতা এ আসনের মনোনয়ন নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বাড়াচ্ছে।
জাতীয় রাজনীতির বর্তমান সমীকরণ এবং স্থানীয় নেতাদের বৈরী সম্পর্ক বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, ফটিকছড়ি আসন আগামী নির্বাচনে বিএনপির হাতছাড়া হয়ে জোটসঙ্গীর হাতে যেতে পারে। এতে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আশায় রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থাকা স্থানীয় নেতাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার শঙ্কা আরও প্রবল হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে