ভোলার বোরহানউদ্দিনে বিয়ে বাড়ির গেইট সাজাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন মিরাজ ইসলাম (২৫) নামের এক টগবগে যুবক। বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তার দুটি হাত ও বুক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতে একটি হাত কেটে ফেলা হয়েছে, অপর হাত থাকলেও তা দিয়ে কোনো কিছু স্পর্শ করতে পারছেন না। দুই হাত হাড়িয়ে পঙ্গু হয়ে মানবজাতির জীবনযাপন করছেন তিনি।
পঙ্গু মিরাজ টবগী ইউনিয়নের মুলাইপত্তন গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি ডেকোরেটরের কাজ করতেন এবং সদ্য বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম সুমাইয়া বেগম। জানা গেছে, গত বছরের ৭ জুলাই ২০২৫ বিকেলে ওই ইউনিয়নের লেবুকাটা এলাকায় বিয়ে বাড়ির গেইট সাজাতে গিয়ে ৩৩ হাজার ভোল্টের তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন মিরাজ। মুহূর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) পাঠানো হয়।
বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মিরাজের বুক ও দুই হাত মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ায় পুনরায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসার পর মিরাজের একটি হাত কেটে ফেলা হয়। অপর হাতও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেন। এছাড়াও বুকের হাড় ভেঙে গেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হাতের অঙ্গহানি এবং বুকের ক্ষতের কারণে মিরাজ আর কখনোই স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারবেন না। যথাযথ চিকিৎসা না করালে শরীরে চরম ক্ষতি হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মিরাজ ও তার স্ত্রী সুমাইয়া বেগম দো-চালা একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন। বিয়ের এক বছরের মাথায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এখনও সন্তান পাননি তারা। যে ঘরে বসবাস করছেন, তার ভিটেমাটি অন্যের বলে জানিয়েছেন মিরাজ। দুর্ঘটনার আগে ডেকোরেটরের কাজ করে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে সুখে ছিলেন তিনি, কিন্তু এখন কাজ করতে না পারায় এবং খাওয়া-দাওয়া সীমিত হওয়ায় স্থানীয়দের সাহায্য ছাড়া জীবনযাপন করছেন।
আহত মিরাজ জানান, “দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চিকিৎসা করানো হয়েছে, কিন্তু এখন সংসার ও চিকিৎসা চালানোর কোনো উপায় নেই। অস্বাভাবিক জীবনযাপন আর যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করছি। দু মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য দেশবাসীর সাহায্যের আবেদন করছি।”
মিরাজের স্ত্রী সুমাইয়া বেগম বলেন, “বিয়ের ৮ মাসের মাথায় মিরাজের দুর্ঘটনায় আমাদের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বিয়ের পর সুখের সংসার হলেও এখন না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। স্বামীর চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।”
মিরাজের মা জানান, “২০ বছর আগে স্বামী হারানোর শোক কাটিয়ে সন্তানদের মুখে হাসি ফোটার সময়ই পরিবারের উপর নেমে আসে শোকের ছায়া। সংসারের বাকী সদস্যদের ভরনপোষণে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মিরাজ। এখন তার জীবন বাঁচানো এবং চিকিৎসা ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দুই হাত জোড় করে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করছি।”
বোরহানউদ্দিন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান উজ্জামান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মিরাজ আবেদন করলে তাকে সাহায্য করা হবে।
অসুস্থ হলেও কর্ম করে সংসার চালাতে চাইছেন মিরাজ। তাই দু মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য সরকারি, বেসরকারি কিংবা সমাজের বিত্তবানদের নিকট আর্থিক সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন মিরাজের পরিবার।
একুশে সংবাদ/এ.জে