চট্টগ্রামজুড়ে দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। বর্ষার মৌসুমেও বিলুপ্তির পথে রয়েছে প্রায় ৭০ প্রজাতি। একসময় মাছভরা খাল-বিল, হাওর এবং নদ-নদীতে ছিল প্রাচুর্য, এখন তা অতীতের স্মৃতি মাত্র।
বাংলাদেশের নদীমাতৃক ভূখণ্ডে ২৬০ প্রজাতির দেশি মাছের মধ্যে ৭০টির অস্তিত্ব হুমকির মুখে। পানির স্বল্পতা, কৃষিজমিতে সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার, মাছ ধরার নিষিদ্ধ জাল এবং মাছ মারার বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে উৎপাদন কমছে দিন দিন।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, দোহাজারী, সাতকানিয়া, কর্ণফুলী ও লোহাগাড়া উপজেলায় একসময় দেশি মাছের অফুরন্ত সরবরাহ থাকলেও এখন বাজার ভরে যাচ্ছে হাইব্রিড ও বিদেশি মাছ যেমন— পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, সিলভার কার্প এবং বার্মা রুইয়ে।
একসময় কই, শিং, মাগুর, পুটি, চিড়িং, ব্যঙ্গমাছ, বেলে, টেংরা, শোল, গজারের মতো দেশি মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। দোহাজারীর বাসিন্দা আবু তৈয়ব বলেন, “হাওর-বাওর শুকিয়ে মাছ ধরা, সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল এবং কীটনাশকের কারণে দেশি মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। রেণু পোনা আহরণও এ জন্য দায়ী।”
বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকার বাসিন্দা কালাম জানান, “ছোটবেলায় খাল-বিলে যেসব দেশি মাছ ধরা যেত, এখন তার ছিটেফোঁটাও নেই। কারেন্ট জাল, কীটনাশক এবং বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে প্রজাতিগুলো বিলুপ্ত হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এসব মাছ খাওয়া তো দূরের কথা, দেখতেও পাবে না।”
চট্টগ্রামের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু নাঈম বলেন, “পানির স্বল্পতা, নির্বিচারে মাছ ধরা এবং রেণু নিধনের কারণে মিঠা পানির মাছ কমছে। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখা এবং মা-পোনা মাছ রক্ষা করলে দেশি মাছের অভয়ারণ্য আবার ফিরে আসতে পারে।”
স্থানীয়দের মতে, সরকারি উদ্যোগ, সচেতনতা ও কঠোর আইন প্রয়োগ ছাড়া দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষা করা কঠিন হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে