দুর্গোৎসবের আগেই কলকাতার বাজারে এসে পৌঁছোল বাংলাদেশের ইলিশ মাছ। বুধবার রাতে বনগাঁ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢোকে মাছভর্তি ট্রাক। প্রথম দফায় ৫০ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছে। পরে আরও ৫০ মেট্রিক টন মাছ আসে। বৃহস্পতিবার সকালে কলকাতা এবং হাওড়ার মাছ ব্যবসায়ীরা নিলামে অংশ নেন। নিলামে ইলিশ কেনেন তাঁরা। খুচরো বাজারে ইলিশের কেজি প্রতি দাম পড়বে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা। তবে চাহিদা বাড়লে সেই অনুযায়ী দামও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
ফলে ইলিশের বাড়ির মানুষেরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর ভোলার ইলিশের স্বাদ নিচ্ছেন কলকাতার মানুষ। তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘ কয়েক মাস পর এখানকার নদী ও সাগরে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়লেও সেই ইলিশের স্বাদ নিতে পারছেন না জেলাবাসী। এটির কারণ হিসেবে জেলেরা দুষছেন একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী ও আড়ৎদারদের। সরেজমিনে ভোলার বিভিন্ন মাছঘাট ও আড়ৎসমূহে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইলিশ পাচারের আদ্যোপান্ত।
জানাযায়, প্রতিবছর বাংলাদেশ হতে ভারতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ইলিশ রপ্তানি হতো কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের বানিজ্য মন্ত্রণালয় এবার তা সীমিত করেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি এবার ভারতে ১২শ` মে. টন ইলিশ রপ্তানির বাধ্যবাধকতা জুড়ে দিয়েছে। গত বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রথমে ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওইবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে শেষ পর্যন্ত ২ হাজার ৪২০ টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। এবার এর অর্ধেক ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়। গত বছর সব মিলিয়ে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল ৪৯টি প্রতিষ্ঠানকে।
অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি না করা, অনুমতি কোনোভাবেই হস্তান্তর না করা এবং অনুমোদিত রপ্তানিকারক ছাড়া ঠিকায় (সাব-কন্ট্রাক্ট) রপ্তানি না করার শর্তও দেয়া হয়েছে সরকারের ওই আদেশে। তাতে বলা হয়েছে, সরকার যেকোনো সময় এ রপ্তানি বন্ধ করতে পারবে। কিন্তু ভোলা উপকূলের মৎস্য ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, সরকারের দেয়া নিয়মে নানা কথা থাকলেও অধিকাংশ এলসিকারক এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না। তারা বিভিন্ন পন্থা ও কৌশল খুঁজে পূজার মৌসুমে কলকাতার বাজারে ইলিশে সয়লাব করে দিচ্ছেন।
ভোলার সাগর কুলের চরফ্যাশন উপজেলার প্রাচীন মৎস্য কেন্দ্র সামরাজ বন্দরের মাছ রপ্তানিকারক মীজানুর রহমান বলেন, ভোলার ইলিশগুলো প্যাকেটজাত করে আমরা যশোরের বেনাপোল স্টেশন ক্রস করে কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনের পাশের মানিকতলা বাজার নিয়ে যাই। ওই বাজারটি ইলিশ মাছ বিক্রির জন্য বিখ্যাত। তিনি জানান, দুর্গাপূজার আগে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও সেখানকার শহরতলির বাজারে ভোলার ইলিশ গেলেই ক্রেতা ও বিক্রেতাদের আনন্দের সীমা থাকে না। অপর মাছ চালানকারী মাইনউদ্দিন মিয়া বলেন, আমরা যে ইলিশগুলো সংগ্রহ করে ভারতে বিক্রি করি তা স্থানীয় বাজারের চাইতে কলকাতায় ভালো দাম পাই। আবার সেই ইলিশ আমাদের চাইতে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয় আরো চড়া মূল্যে। তিনি বলেন, সেখানকার খুচরা বাজারগুলোতে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়ার প্রতি ৭শ` গ্রাম থেকে ১ কেজি ২শ` গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ` থেকে ২ হাজার ৩শ` রুপিতে।
ভোলা সদরের তুলাতুলি মৎস্যঘাটের ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম জানান, পশ্চিমবঙ্গের বাজারে গত বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ভোলার মিঠা পানির স্বাদের ইলিশ রপ্তাণী শুরু করেছি। তিনি জানান, ভোলার ইলিশ কলকাতার পাতিপুকুর, শিয়ালদহ, বারাসাত ও হাওড়া এলাকার হোলসেল মাছ বাজারে নিলাম হওয়ার পর সেই মাছ খুচরা বিক্রেতাগণ সেখানকার বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যান।
ইলিশ রপ্তানির সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকজন পুরোনো ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার ইলিশের তুলনায় ভোলার ইলিশের দাম কলকাতার বাজারে খুব চড়া। তাই আমরা দুর্গাপূজার মৌসুমেই কলকাতার বাজারে ভোলার ইলিশ রপ্তানির মাধ্যমে পুরো বছরের মাছ ব্যবসার লোকসান পুষিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারি।
ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ভূঁইয়া বলেন, এবার ভোলার নদ-নদীতে ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এখানকার ইলিশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করলে রাষ্ট্র অধিক লাভবান হতে পারবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, ভোলার হাট-বাজারগুলোতো ইলিশ মাছের সরবরাহ খুব কম। যা আছে তা আকারে খুবই ছোট।
একুশে সংবাদ // র.ন