জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভার সড়াইল মহল্লার স্বামী পরিত্যক্তা বৃদ্ধা লিলিমন বিবি গত দুই দশক ধরে বিদ্যুৎবিহীন কুপির আলোতে জীবন কাটাচ্ছেন। ‘গ্রাম হবে শহর, পল্লী হবে সমৃদ্ধ’ স্লোগানে ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে সরকার যখন বদ্ধপরিকর, লিলিমন তাতে অনড়।
ভাঙা টিনের ছোট্ট ঘরে একা বসবাস করা এই নারী কখনও হিমাগারে আলু বাছাই বা পাশের বাড়িতে ঝি-হিসেবে কাজ করে দৈনিক মাত্র ১৫০–২০০ টাকা আয় করেন। দিন কাটে পেটের খুদা মেটানোর লড়াইয়ে, আর রাতে আশ্রয় নেন কুপির ক্ষীণ আলোতে।
স্থানীয়দের মতে, লিলিমনের বসবাসের পরিবেশ অত্যন্ত করুণ। গরমে তার ঘরে থাকা দুঃসহ হয়ে ওঠে, আর আশেপাশের পরিবেশও রাতের বেলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন। সমাজের বিত্তবান ও প্রশাসনের নজরেও তিনি আসেননি।
সড়াইল মহল্লার বাসিন্দা সালমা বেগম বলেন, “লিলিমন খুব কষ্টে থাকে। প্রচন্ড গরমে একা থাকা দায়, মাঝে মাঝে আমাদের ফ্যানের নিচে একটু বিশ্রাম নিতে আসে। সরকার যদি তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতো, অন্তত শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারতো।”
প্রতিবেশী হানিফ মন্ডল ও হাবিবুল হোসেন জানান, বৃদ্ধ বয়সে একা খেটে দিন পার করা, বিদ্যুৎ না থাকা—সব মিলিয়ে তার জীবন খুবই কষ্টকর।
লিলিমন বেওয়া বলেন, “বিগত ২২ বছর ধরে অন্ধকারে বসবাস করছি। পেটের খুদা মেটানোর সামর্থ্য নেই, তাহলে ৪–৫ হাজার টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ কিভাবে নিব? খেয়ে আছি, না খেয়ে আছি, কেউ খোঁজও নেয়নি। বিদ্যুৎ দিবে কে? পৃথিবীতে আমার কেউ নেই।”
জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কালাই জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক জুবায়ের হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ সুবিধা পাওয়ার অধিকার সবারই আছে। লিলিমন কখনও আবেদন করেননি। করলে সবার আগে তার বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতার তাগিদে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামিমা আক্তার জাহান জানান, “লিলিমনের বিষয়ে অবগত হয়েছি। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে খুব দ্রুত তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হবে।”
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে