ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এক অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথাকাটাকাটির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলা ছাত্রদল নেতা আদি খান শাকিলের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে পাঁচ রাস্তা থেকে বাসস্ট্যান্ডমুখী সড়কে যানজটের সময়। ছাত্রদল কর্মী মো. আশফাকুর ইসলাম সিয়াম জানান, ঘটনার দিন তিনি পাঁচ রাস্তা থেকে বাস স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। শুরু থেকেই রাস্তায় প্রচণ্ড যানজট থাকায় ধীরে ধীরে এগোচ্ছিলেন। বাস স্টেশনের নতুন ইটের রাস্তা দিয়ে যখন তিনি যাচ্ছিলেন, তখন দেখেন—একটি অটোরিকশায় এক কিশোর চালক কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনছে এবং পা রেখেছে হ্যান্ডেলের উপর।
তিনি বলেন, “আমি তাকে বারবার ডাকলেও সে শোনেনি। পরে বাইক দিয়ে অটোরিকশায় হালকা ধাক্কা দিলে সে টের পায়। তখন উল্টো রেগে গিয়ে বলে, ‘এই মিয়া, আপনার কী সমস্যা?’ পরে আশেপাশের দোকানিরা তাকে বকাঝকা করে সরিয়ে দেয়।”
সিয়ামের দাবি, এরপর তিনি তিনবার অটোরিকশাটি ওভারটেক করতে গেলে চালক ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে চাপ দেন। মেইন রোডে ওঠার পর কারণ জানতে চাইলে কিশোর চালক বলেন, “সমস্যা কী? আবার করব।” তখন সিয়াম তার কান থেকে হেডফোন খুলে একটা থাপ্পড় দেন।
এসময় এক অচেনা ব্যক্তি হঠাৎ এসে সিয়ামের ওপর হামলা চালান। এরপর প্রাইভেট কার চালক কৃষ্ণ এগিয়ে এসে সিয়ামের টি-শার্টের কলার চেপে ধরেন। সিয়াম তাকে লাথি দিলে, কৃষ্ণ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ সিয়ামের বুকে পরপর তিন-চারটি ঘুষি মারেন। একই সময়ে সিয়ামের সঙ্গে থাকা সেলিম নামের সিয়ামের এক বড় ভাইকেও কৃষ্ণ আঘাত করেন। পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সিয়ামের পরিচিত কয়েকজন ড্রাইভার দ্রুত এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
ঘটনার পর সিয়াম বাসায় ফেরেন, কিন্তু পরে বুকে ব্যথা ও হালকা বমি অনুভব করলে হাসপাতালে যান। ডাক্তার তাকে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেও তিনি ভর্তি হননি।
সিয়াম আরও জানান, অটোরিকশা চালকের মালিককে ফোন করলে তিনি ১০ মিনিটের মধ্যে বিষয়টি মীমাংসা করার আশ্বাস দেন, কিন্তু পরে আর কোনো ব্যবস্থা নেননি।
অভিযোগ করে সিয়াম বলেন, “ ‘বিউটিফুল ভালুকা’ নামের ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়—কেউ কৃষ্ণকে মারেনি। ধস্তাধস্তি হয়েছে ঠিকই, তবে সরাসরি কোনো আঘাত করা হয়নি কৃষ্ণকে। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্নও নেই।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা ছাত্রদল নেতা আদি খান শাকিলকে জড়িয়ে মন্তব্য আসে। ঘটনার বিষয়ে শাকিল জানান, “কৃষ্ণ (ড্রাইভার), পিতা রনজিত—ওই ছেলেটির সাথেও আজ আমার দেখা হয়নি। কৃষ্ণ নিজেই তা প্রমাণ করতে পারবে। আমি রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়, আমার ভালুকা উপজেলায় হাজার হাজার কর্মী রয়েছে। কিছু অসাধু ব্যক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে।”
এ বিষয়ে উপজেলা ছাত্রদল নেতা শাকিল বলেন, “আমি কালকে সারাদিন ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় ছিলাম।”আমি আমার রাজনৈতিক অভিভাবক মহোদয়দের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
সিয়ামের ছোট ভাই সিফাত সানজিক বলেন, “আমার ভাইয়ের ব্যবহার ও চরিত্র এলাকা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সবার জানা। তিনি রাজনীতি করেন ঠিকই, তবে কাউকে অকারণে ক্ষতি করেন না। তার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা ঠিক নয়।”
এ বিষয়ে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ‘বিউটিফুল ভালুকা’ নামে একটি ফেসবুক পেজে যাচাই-বাছাই ছাড়াই পোস্ট দেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদের আগে ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের আহ্বান জানিয়েছেন।
সিয়াম আরও বলেন, “ঘটনাটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। আমাকে শাকিল ভাই বা সোহাগ ভাই কেউ কিছু বলেননি, এবং তাদের কারও সঙ্গে আমার গত ৩-৪ দিন ধরে যোগাযোগ হয়নি। শাকিল ভাইকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করতে চায়—এটা কম-বেশি সবাই জানে। এখানে শাকিল ভাই বা সোহাগ ভাইকে যারা জড়ানোর চেষ্টা করছেন, তারা ভুল ধারণা করছেন। ওভারব্রিজ এলাকায় অবশ্যই সিসি ক্যামেরা রয়েছে, চাইলে ফুটেজ দেখে ঘটনাটি যাচাই করা যাবে।”
ভালুকার ছাত্রসমাজ আদি খান শাকিলকে দেখেন একজন সাহসী, স্পষ্টভাষী ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো তরুণ নেতা হিসেবে। শিক্ষা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ এবং ছাত্রদের পাশে থাকা তাকে ছাত্রনেতাদের মধ্যে অনন্য করেছে। বহু ছাত্রদল কর্মী জানিয়েছেন—শাকিল ভাইয়ের মত ত্যাগী নেতৃত্ব আজকের প্রজন্মকে রাজনীতিতে ইতিবাচকভাবে যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করছে।
স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছেও আদি খান শাকিল একজন বিশ্বাসযোগ্য ও নির্ভরযোগ্য কর্মী। সংকটময় সময়ে তার শান্ত ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত এবং সংগঠনের স্বার্থে আপসহীন অবস্থান সিনিয়র নেতাদের আস্থা অর্জন করেছে। বহু নেতা প্রকাশ্যে বলেছেন—ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের আগামী দিনের নেতৃত্বে শাকিলের মতো তরুণদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবি।
ভালুকার প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় শাকিলের রয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের শক্ত ভিত। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকা, অসুস্থদের চিকিৎসা সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের সহায়তা এবং রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো—এসবই তাকে তৃণমূলের কাছে এক নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভালুকার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ছাত্রদলের তরুণ, উদ্যমী এবং গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে শাকিল ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তার ইতিবাচক ভূমিকা তাকে আলাদা পরিচিতি দিয়েছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য নিয়ে সচেতন মহল উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন—যাচাই ছাড়া কোনো তথ্য প্রচার করলে ব্যক্তির সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তারা দ্রুত এ ধরনের অপপ্রচার বন্ধ করে সুস্থ ও গঠনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে শাকিল অভিযোগ করে বলেন, “রাজনৈতিকভাবে আমার ক্ষতি করার জন্য দুই দিন পর পর নতুন নাটক তৈরি করা হচ্ছে। এর আগেও অপপ্রচারের কারণে আমাকে ভালুকা পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।”
ভালুকার অনেক তরুণ, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ ফেসবুকে লিখেছেন—"শাকিল ভাইয়ের মতো সৎ, ত্যাগী ও সাহসী নেতার হাতেই ভালুকা উপজেলা ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেখতে চাই।"
সচেতন মহলের মতে, এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক অপপ্রচারকে রুখে দিয়ে ভালুকার তরুণ নেতৃত্বকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার—আর সেই নেতৃত্বের প্রতীক হচ্ছেন আদি খান শাকিল।
একুশে সংবাদ/ম.প্র/এ.জে