ভাদ্র-অশ্বিনজুড়ে শরৎকালের রাজত্ব। আর শরৎ মানেই প্রকৃতিতে কাশফুলের সাদা হাসি। ঝোপঝাড়, রাস্তাঘাট ও নদীর দুই ধারসহ আনাচে-কানাচে ভেসে ওঠে কাশফুলের মন মাতানো সৌন্দর্য। কবি জীবনানন্দ দাশ যেমন লিখেছিলেন—“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”—তেমনি শরতের কাশফুলেই ধরা দেয় বাংলার অপরূপ রূপ-লাবণ্য।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর এলাকার বিটিআরআই সংলগ্ন ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাড় ঘেঁষে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে প্রস্ফুটিত সাদা কাশফুল। দোল খাওয়া সেই শুভ্র কাশফুল যেন প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলেছে অনন্য রূপে, যা হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রকৃতিপ্রেমী ও পর্যটকদের।

ভানুগাছ সড়কের কাশফুলের বালুচর প্রতিদিনই মুখরিত হচ্ছে দর্শনার্থীদের পদচারণায়। শ্রীমঙ্গল ও আশপাশ থেকে আসা মানুষজনের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও কাশফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও দল বেঁধে আসতে দেখা যায়। কেউ কাশফুলের ভেতরে ঢুকে ছবি তুলছেন, কেউবা মুক্ত বাতাসে বালুচরে হাঁটছেন।
প্রতি বছর আগস্টের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত থাকে কাশফুলের এ সৌন্দর্যের রাজত্ব। স্থানীয়রা জানান, এ সময় শ্রীমঙ্গলের ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার কাশবন তাদের বিনোদনের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে ওঠে।

কাশফুল দেখতে আসা দর্শনার্থী তামিম, সাহেদ, সুমি প্রমুখ বলেন, “চা বাগানের ফাঁকে ছড়ার পাশে দিগন্তজোড়া কাশফুল যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। শুভ্র কাশফুলের দোল খাওয়া দৃশ্য চোখ ও মন দুটোই ভরিয়ে দেয়।”
স্থানীয় ট্যুর গাইড শ্যামল দেব বর্মা বলেন, “দিগন্তজোড়া কাশফুলের মনোরম দৃশ্য যে কাউকে আন্দোলিত করে। শরৎ ঋতুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য কাশফুল পর্যটন আকর্ষণেও বড় ভূমিকা রাখছে।”
শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল আশিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, “ষড়ঋতুর দেশে শরৎকাল এখন অনেকটাই অবহেলিত। কিন্তু শ্রীমঙ্গলের কাশবন স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছেও প্রতি বছর দুই মাসের জন্য দারুণ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।”
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, কাশফুল ছন গোত্রীয় একধরনের ঘাস। এর আদি নিবাস রোমানিয়া। এটি সাধারণত নদীর ধারে বেশি জন্মে, তবে চরাঞ্চল, জলাভূমি, পাহাড়ি এলাকা বা উঁচু জমিতেও কাশবন গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, “কাশবন প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে