রাজশাহীর তানোরে ডিজিটাল পোস্ট অফিসের ৫৩ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা পোস্ট মাস্টার কর্তৃক আত্মসাৎ হওয়ার প্রমাণ মেলেছে। দীর্ঘদিনেও টাকা ফেরত না পাওয়ায় ভুক্তভোগী গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা আশঙ্কা করছেন, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ধরে তানোর পোস্ট অফিসের সামনে এবং উপজেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেন গ্রাহকরা। তারা জানান, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, তানোর ডিজিটাল পোস্ট অফিসের পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী সঞ্চয়পত্রের টাকা সরকারী লেজারে জমা না রেখে আত্মসাৎ করেছেন। তদন্তে প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পোস্ট মাস্টার মুখছেদ আলী প্রায় তিন বছর ধরে ৫৩ জন গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রের ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লেজারে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। তবে গ্রাহকদের পাশ বইয়ে জমা দেখানো হয়েছে।
গত ২০২৪ সালের মার্চে বিষয়টি প্রকাশ পেলে গ্রাহকরা মুখছেদ আলীকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে ডাক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তদন্তে টাকা আত্মসাৎ প্রমাণিত হওয়ায় পোস্ট মাস্টারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং পুলিশে সোপর্দ করে তানোর থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরে রাজশাহী দুর্নীতি দমন কমিশনে মামলা দায়ের করা হয়। অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, তবে অফিসে আসছেন না এবং টাকা ফেরত দিচ্ছেন না।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ও পোস্ট অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাননি। তানোর সদর গ্রামের মৃত জামালের স্ত্রী সিরিনা বলেন, “৮ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্রে জমা ছিল, কিন্তু এখনও ফেরত পাইনি।”
অন্য ভুক্তভোগীরা যেমন কুয়েত প্রবাসী মাসুদ রানা বলেন, “২৬ লাখ টাকা ফেরত পাচ্ছি না।” আশিষ মালাকারের স্ত্রী গৌরী সরকার জানান, “৩ লাখ টাকা ফেরত পাইনি।” হিরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “১০ বছরের মেয়াদে ১০ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম, পোস্ট মাস্টার ১৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।” এছাড়া রাজ কুমার ১ লাখ ৮০ হাজার, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম ২ লাখ ৫০ হাজার এবং মিনতি সরকার ৮ লাখ টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে কঠোর আন্দোলন করা হবে।
এ বিষয়ে তানোর পোস্ট অফিসের বর্তমান পোস্ট মাস্টার আব্দুল মালেক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পূর্ববর্তী পোস্ট মাস্টার আত্মগোপনে রয়েছে। তিনি রাজশাহী বিভাগীয় পোস্ট মাস্টার ডেপুটি জেনারেল রাকিব বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন।”
একুশে সংবাদ/রা.প্র/এ.জে