চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীর পাড় ঘেঁষে ফের অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে চলছে বালু উত্তোলন। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে মেঘনা-ধনাগোদা বন্যা নিয়ন্ত্রণ সেচ প্রকল্পের ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ।
গত কয়েক মাস ধরে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন হলেও প্রশাসনের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। সম্প্রতি উপজেলার মেঘনা নদীর উপকূলীয় দশানি, ষাটনল, নাছিরা কান্দি ও বোরচর এলাকায় ড্রেজার দিয়ে প্রকাশ্যে বালু তুলতে দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বালু সন্ত্রাসী কিবরিয়া মিয়াজি ও তার সহযোগীরা দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে একাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় এখনো মামলা চলমান রয়েছে।
দশানি গ্রামের বাসিন্দা মাজেদুর রহমান বলেন, “দিন-রাত মেশিন বসিয়ে বালু তোলে। নদীর পাড় ধসে আমাদের ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে পুরো এলাকা পানিতে তলিয়ে যাবে। অথচ কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “প্রশাসনকে বারবার জানালেও কোনো ফল পাইনি। মনে হয় বালু সিন্ডিকেটের কাছে প্রশাসন জিম্মি।”
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘মাটি ও মানুষ’-এর পরিচালক শামীম খান বলেন, “সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন অবৈধভাবে ড্রেজার চলছে। এতে শুধু নদীভাঙনই বাড়ছে না, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি তৈরি হচ্ছে।”
এ বিষয়ে মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, “মূলত মুন্সিগঞ্জ এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য প্রশাসন অনুমোদন দিয়েছে। তবে নৌ পুলিশ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত তৎপর রয়েছে।”
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “মতলব উত্তরের সীমানায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান পরিচালনা করছি।”
চাঁদপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। অচিরেই যৌথ বাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কেউ পার পাবে না। বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে লাখো মানুষ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ/চাঁ.প্র/এ.জে