মাত্র ৫০ হাজার টাকার জন্য আপন চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের হাতে প্রাণ গেল প্রবাসফেরত বাবুর (২২)। রক্তে ভেসে গেল পারিবারিক আঙিনা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গলা কেটে মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাবা রওশন আলী (৫৫) ও ছোট ভাই আরমান (২০)।
নৃশংস এই ঘটনাটি ঘটে সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুর ২টার দিকে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪নং সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের গাজী বাড়িতে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানা গেছে, নিহত বাবু, তার পিতা রওশন আলী ও ছোট ভাই আরমানকে ডেকে নেন রওশনের ভাই হাসান (৫০)। অভিযোগ, বাবুকে বিদেশ পাঠাতে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন হাসান। সেই টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে তর্ক-বিতর্ক হয়। একপর্যায়ে হাসান, তার ছেলে শাকিল (২৫) ও পুত্রবধূ সুমাইয়া (২০) মিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালান।
প্রথমে ছুরিকাঘাতে বাবুর পেটে আঘাত করা হয়, পরে তাকে জবাই করা হয়। পুত্রবধূ সুমাইয়া অস্ত্র এগিয়ে দেন, আর হাসান ও শাকিল এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। ঘটনাস্থলেই বাবুর মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত রওশন আলী ও আরমানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের শ্বশুর কামাল ও স্থানীয়রা জানান, হাসানের টাকা পাওয়ার দাবি মিথ্যা। এ নিয়ে রোববার বিকেলে সাহার বাজারে সালিস বসে এবং সোমবার বিকেলে আবার বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
হত্যাকাণ্ডের পর হাসান ঘরে লুকিয়ে থাকলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পাশের ঘরে পালিয়ে থাকা শাকিলের স্ত্রী সুমাইয়াকেও ধরা হয়। শাকিল বাড়ি থেকে পালিয়ে মুন্সিরহাটে গেলে স্থানীয়রা চিনে ফেলে এবং আটক করে গণধোলাই দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকেই উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
নৃশংস হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে ভিড় করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়।
খবর পেয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফরিদগঞ্জ–হাজীগঞ্জ সার্কেল) মুকুর চাকমা এবং ডিবি পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, “প্রাথমিকভাবে টাকা-পয়সার লেনদেনের বিষয়টি জানা গেছে। সালিস বৈঠকের আগেই এ ঘটনা ঘটে। আটক তিনজনকে থানায় আনা হয়েছে, আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।”
একুশে সংবাদ/চাঁ.প্র/এ.জে